নিউজ ডেস্ক : দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কয়টিতে একযোগে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। আমলাদের সমান মর্যাদা ও বেতনভাতাসহ ৫ দফা দাবিতে আজ সোমবার থেকে শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে।
সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির কারণে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে না।
শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলনের কারণে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে। আন্দোলন প্রলম্বিত হলে শিক্ষার্থীরা নতুন করে সেশনজটে পড়বে। এতে দীর্ঘায়িত হবে শিক্ষাজীবন।
তবে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ ও তাদের শিক্ষাজীবন রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে কর্মসূচি চলাকালে শুধু সেমিস্টার ফাইনাল ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবির অন্যতম হচ্ছে, অধ্যাপকদের একটি অংশকে সিনিয়র সচিবের সমান বেতনভাতা দেয়া। এছাড়া নতুন পে-স্কেলে, সপ্তমের (৭ম পে-স্কেল) আদলে সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেলসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করা, প্রভাষকের পদ অষ্টম গ্রেডে উন্নীত করা, সরকারি কর্মকর্তাদের মতোই উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে সুযোগ দেয়া এবং গাড়ি কেনার ঋণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা প্রদান।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘অষ্টম পে-স্কেলে নানা অসঙ্গতি আছে। গত ৮ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষকরা তা নিরসনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপনে তার কোনো প্রতিফলন নেই। অসঙ্গতিগুলোও নিরসন করা হয়নি। এ কারণে শিক্ষকরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাভাবনাও আছে।’
বেতনভাতার ইস্যুতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ইতিহাস বাংলাদেশে এই প্রথম। এ আন্দোলন অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে। এর সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ ভিড়ে যেতে পারে বলে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেন। তাদের মতে, শিক্ষক আন্দোলনকে ইস্যু করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যে কারণে তারা ইস্যুটি দ্রুত নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের মর্যাদা ‘অবনমনের’ প্রতিবাদ ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে গত আট মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শুরুতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বক্তব্য-বিবৃতি ও নির্দিষ্ট সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। সরকারের কোনো মহল তাদের সঙ্গে আলোচনা না করায় ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিরা দেখা করলে মন্ত্রীরা তাদের দাবির ব্যাপারটি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি গঠিত হয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর পে-স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর তাতে শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ করে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
তাদের অভিযোগ, গত ৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গেজেটে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জানুয়ারি ঢাবি’র সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। বৈঠকে ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১১ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ