বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : ১০ জানুয়ারি রবিবার ছিল বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে প্রত্যাবর্তন দিবস। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়েছিলাম, হানাদারদের পর্যুদস্ত-নাস্তানাবুদ করেও বঙ্গবন্ধুকে না পেয়ে অতৃপ্ত ছিলাম।
কেন যেন বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া স্বাধীনতাকে সেদিন তেমন অর্থবহ, পূর্ণাঙ্গ মনে হয়নি। আজ স্বার্থান্ধ যে যাই বলুক মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই ছিল সব চিন্তা-চেতনা, বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুই ছিলেন স্বাধীনতা, তখন মনে হতো তিনিই বাংলাদেশ। এ সত্য আজ মুছে ফেলার চেষ্টা হলেও যতদিন আমরা আছি ততদিন তা সফল হবে না।
কত চেষ্টা, তবু কেন যেন মহাসড়কে মৃত্যু থেকে মুক্তি নেই। সেদিন যমুনা সেতুর আশপাশে কুয়াশায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পাবনার প্রবীণ নেতা, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ভাইয়ের ছেলে রানা শরীফ ছিল। খবরটা শুনে মনটা কেমন যেন দুমড়ে গিয়েছিল। সেই কবে থেকে ডিলু ভাইকে চিনি। সুখে-দুঃখে মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন।
’৯০-এ দেশে ফেরার পর যশোর-কুষ্টিয়া-রাজশাহী এক লম্বা সফরে গিয়েছিলাম। ভেড়ামারা থেকে ঈশ্বরদী যাওয়ার দিন হরতাল ছিল। সে হরতালের মাঝেও ডিলু ভাই ভেড়ামারা ফেরিঘাট পর্যন্ত এগিয়ে এসে আমাদের নিয়ে এসেছিলেন। ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে এক বিরাট সভা হয়েছিল। হঠাৎই তার ছেলের মৃত্যুর সংবাদে বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠেছে। বড় বেশি খারাপ লাগছে। আল্লাহ তাদের এ শোক সইবার শক্তি দিন এবং নিহতকে বেহেশতবাসী করুন, আমিন।
সবাই কেমন যেন ক্ষমতা দেখায়। পত্র-পত্রিকায়ও কখনোসখনো সেই ক্ষমতার ভূত দেখি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শুরু থেকেই লিখছি। ভালো-মন্দ মিলিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই আছি। বয়স হয়েছে, তাই মাঝেমধ্যে কাঁচির আঁচড় বেশি হলে বিরক্ত লাগে। ’৯০-এ দেশে ফিরে নঈম নিজাম ও আরও কয়েকজন সাংবাদিককে খুব ছোট পেয়েছিলাম। এখন তারা বেশ বড় হয়েছে।
নঈম নিজামই বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখতে আগ্রহী করেছিল। বলতে গেলে শুরুতে নঈমকে খুশি করতেই লিখতাম। এখন দয়াময় আল্লাহকে খুশি করতে আমার নিজের তৃপ্তি ও পাঠকদের কাছে জবাবদিহি করতে লিখি। সেদিন টঙ্গী হয়ে গাজীপুরের পথে বিশ্ব ইজতেমার সফলতা কামনায় গাজীপুর পুলিশের ব্যানার দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম। ‘কিন্তু শত শত বছর ধরে শীতের মৌসুমে গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে ওয়াজ-মাহফিল, পাগলের মেলা, ধর্মীয় সভা সেই পুলিশরাই যখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তখন মন বিক্ষুব্ধ না হয়ে পারে না।’
এটুকু ছাপেনি। এ লাইনটা ছাপলে কী এমন আসমান ভেঙে পড়ত? জানি না কবে এসব কারণে হঠাৎই লেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্পাদকের আন্তরিকতায় আমি খুবই খুশি, তাই চেষ্টা করি লেখা চালিয়ে যেতে। হুজুর মওলানা ভাসানীর প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছিলাম, সেখানেও এক শব্দ ঘুরিয়ে আমার লেখার গতিটাই বদলে দেওয়া হয়েছে। ’৭৩-এর দিকে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি একে ওকে মারছিল।
কত যে খুন, কত যে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে একদিন হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে সন্তোষে গেছি। মর তো মর সেদিনই ছদ্মবেশে সিরাজ সিকদারও গিয়েছিলেন। আমি যখন হুজুরের কাছে যাই, অন্যদিনের মতো ‘কাদ্রী এসেছ’ বলে উঠে এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন। হুজুর আমাকে জড়িয়ে ধরলেও তিনি আমার থুঁতনির নিচে পড়ে থাকতেন। কিন্তু মুরব্বি হিসেবে জড়িয়ে ধরে কতবার দোয়া করেছেন।
সেদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ‘কাদ্রী’ শুনে সিরাজ সিকদার কিছুটা উসখুস করছিলেন। তারপর হুজুর যখন বললেন, ‘কাদ্রীকে চিনলে না? মজিবরের ভক্ত, কাদের সিদ্দিকী। আমাকে খুব ভালোবাসে, মান্য করে।’ মজিবরের ভক্ত শুনে সিরাজ সিকদারের জীবন যায় যায়। মুহূর্তে তিনি ঘেমে গিয়েছিলেন। ছটফট করছিলেন। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে হুজুর গর্জে উঠেছিলেন, ‘তুমি না বিপ্লবী? কাদ্রীকে দেখে ছটফট কর? আবার ঘামো? কাদ্রী জানে না অতিথিকে কীভাবে আশ্রয় দিতে হয়?’
পত্রিকায় যিনি কাটাছেঁড়া করেন, হুজুরের সেই কথা ‘তুমি না বিপ্লবী? আবার ঘামো?’ সেই ‘ঘামো’র জায়গায় ‘থামো’ লিখে শুদ্ধ করে আমার অশুদ্ধের মাহাত্ম্যটাই মাঠে মেরেছেন। আরেক জায়গায় মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছিলাম, আজকাল চোখ-মুখ খিঁচিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মাননীয় মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী যখন গর্জন করেন, তখন নিশ্চয়ই আওয়ামীপন্থিদের ভালো লাগে।
কিন্তু যৌবনে ওই একই রকম খিঁচুনি যখন আমাদের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দিতেন তখন আমাদের কেমন লাগত? সেদিন শেরপুরের নেতা হুইপ আতিকুর রহমান মাননীয় মন্ত্রীকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে লিখেছিলাম, শেষ পর্যন্ত ‘উহাকে’ চিনেছেন। এখানেও শুদ্ধ করা হয়েছে ‘তাকে’ ব্যবহার করে।
পাঠকদের কী বলব। সেই আইয়ুব-মোনায়েমের আমলে এক ষাঁড় গরু আইয়ুব খানের বিডি মেম্বারকে গুঁতো দিতে গেলে কোনো ফটোগ্রাফার সৌভাগ্যক্রমে ছবি তুলেছিল। ইত্তেফাকে সেই ছবি ছাপা হয়েছিল। ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, ‘উহাকে চিনিল কেমনে’। আইয়ুব খানের বিডি মেম্বারকে গরুও যে পছন্দ করে না, গুঁতোতে যেত— এটাই ছিল সার কথা। আমার লেখার ‘উহাকে’র জায়গায় ‘তাকে’ করে একেবারে মাটি করে দিয়েছে।
যাক এসব নিয়েই চলতে হবে, চলব। তবে আশা করব যেটা না হলেই নয়, সেটা ছাড়া বেশি পণ্ডিতি হবে না। আমাদের বয়স হয়েছে। লেখকের একটা স্বাধীনতা আছে। যা লিখছি দায়িত্ব নিয়েই লিখছি। লেখার জন্য জেল-ফাঁস যা হওয়ার হবে। তবে পত্রিকা ছাপতে পারবে না, তার ক্ষতি হবে এমন হলে ছাপতে বলতে যাব কেন? কিন্তু ‘উহা’কে শুদ্ধ করার চেষ্টা করতে গিয়ে ‘তাকে’ লিখে অর্ধশত বছরের একটা শ্রেষ্ঠ উক্তি এভাবে মাটি করা খুব ভালো কথা নয়।
বহুদিন পর গিয়েছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামকে দেখতে। ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘মিলন বসে কোথায়? এখানেই কোথাও আছে নাকি?’ সে লোক দিয়ে পাঠিয়েছিল। গিয়ে দেখি কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন চমৎকার একটা রুমে বসা। মিলনকে বলেছিলাম, তোমার শুভ জন্মদিনে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। সে বলেছিল, ‘পত্রিকার জন্মদিন তো আগামীকাল’।
ওই হলো, কাল যেহেতু আসা হবে না, অগ্রিম ধরে নাও। দরজার কাছে যেতেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছিল। অনেক কথা হয়েছে। কুশিমণির কথাও উঠেছিল। অনন্যা প্রকাশনীর মনিরুল হকের প্রসঙ্গ, আনন্দবাজারের অভীক সরকার, বরুণ সেনগুপ্ত, শোভা সেন, দে’জ পাবলিশিংয়ের শুধাংশু শেখর দে— আরও অনেকের কথা। ফেরার সময় একেবারে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এসে বার বার বলছিল, ‘দাদা, লেখাগুলো বই আকারে ছাপবেন। মানুষের কাজে লাগবে।’
ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা আফজাল হোসেন, ফরিদুর রেজা সাগর এরা ছোটবোন শুশুমার সমগোত্রীয়, একই সঙ্গে লেখাপড়া করেছে। ওদের একই সঙ্গে ওঠাবসা। কয়েক বছর আগে মিলনের মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। খুবই ভালো লেগেছিল। রহিমা, শুশুমা, শাহানা আমার তিন বোন। ওদের তিনজনের মধ্যে শুশুমার সব বন্ধু খুব ভালো। ডল, মেঘনা, আঁখি, শম্পা, বন্যা, মুনা, বুলা, কান্তা— কার কথা বলব।
সবাই নিজের ভাইয়ের চেয়েও আমাকে বেশি ভালোবাসে, আদর-যত্ন করে। বছর পাঁচেক আগে জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম কান্তা আমায় দেখতে গিয়েছিল। মন এবং শরীর দুটোই তখন ভেঙে পড়েছিল। আমার মাথা বুকে চেপে মায়ের মতো হাত বুলাচ্ছিল আর কাঁদছিল। ওদের দেখেই মনে হয় মানুষ মানুষকে কত ভালোবাসতে পারে।
আমি যেদিন দেশে ফিরি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেদিন ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে আমার স্ত্রী ও আমাকে মায়ের মতো দুহাতে বুকে চেপে অঝরে কাঁদছিলেন। যে যাই বলুক ওইসব মানবিক গুণাগুণ কোনোমতেই উপেক্ষা করা যায় না। মুসলমান জন্মে একবার, মরে একবার। মুসলমান হিসেবে, মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক মানবিক গুণাগুণ হারিয়ে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া সমান কথা।
গত বছর ২৮ জানুয়ারি মতিঝিলের ফুটপাথে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। উৎপত্তিটা হয়েছিল ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনকে কেন্দ্র করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি সারা দেশে লাগাতার হরতাল-অবরোধ ডেকেছিল। হরতাল ডাকায় তেমন গুরুতর ত্রুটি খুঁজে না পেলেও লাগাতার অবরোধে বা হরতালে অবশ্যই আপত্তি ছিল। তার ওপর যে কারণেই হোক অবরোধ-হরতালের অজুহাতে অনেক লোক ক্ষয় হচ্ছিল, গাড়ি-ঘোড়া পুড়ছিল।
যেভাবেই হোক সরকার জনগণকে অনেকটাই বোঝাতে পেরেছে ওই জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য প্রধান বিরোধী দলই দায়ী। সে সময়ের জ্বালাও-পোড়াও দেখে ঠিক থাকতে না পেরে শান্তির দাবিতে ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছিলাম। আবার ঘুরেফিরে সেই ৫ জানুয়ারি এসেছিল। এবার বিএনপির ৫ জানুয়ারি পালনে ঢাকায় বিপুল জনসমাগম হলেও ঢাকার বাইরে সরকারের গণতন্ত্র রক্ষার কর্মসূচিতেই বরং বেশি কর্মী এবং জনসমাগম হয়েছে।
মাত্র দুই বছরের মধ্যেই এক পক্ষের ভোট রক্ষা আরেক পক্ষের ভোট হত্যা— এ মারপিটে ভোট রক্ষার কথা যারা বলে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেছে তারাই অনেকটা সফল হয়েছে। রাজধানীর বাইরে তেমন কোথাও ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্র হত্যা বা ভোট হত্যা দিবসে বিরোধী কর্মীদের রাস্তায় দেখা যায়নি।
বরং ভোট ছাড়া ভোট রক্ষা আন্দোলন অনেক গতি পেয়েছে। জানি না কীসের স্বার্থে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তানের পথে চলার চেষ্টা করছে। যা কিছুই হোক কোটি কোটি মানুষ জীবন দেবে তবুও স্বাধীনতা দেবে না। স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এ দেশে কেউ আর যা কিছুই হোক মানুষের প্রাণের স্পর্শ পাবে না।
পাকিস্তানের জন্য মায়াকান্না কেঁদে এ দেশে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে, কিন্তু তাদের সঙ্গে পাওয়া যাবে না। ধীরে ধীরে কেন যে বিরোধী দল বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বড় বেশি পাকিস্তানের দিকে যেতে শুরু করেছে— তা আমার বুদ্ধিতে ধরে না। পাকিস্তানের প্রতি অনুগত থেকে দেশপ্রেমী হওয়ার সুযোগ কোথায়?
পাকিস্তান হানাদারদের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কথা আবার আলোচনায় এসেছে। কিন্তু পত্রিকায় যখন দেখি, ‘১৯৫ জন পাক হানাদারের বিচার’ তখন যেন কেমন লাগে। পাকিস্তান পাক, সেনাবাহিনী পাক, যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ হানাদারের আগে লেখা হয় পাক। ওই নাপাকরা কীভাবে এতটা পাক হলো সবার কলমে ভূতের মতো পাক হয়ে বেরিয়ে আসে। এসব থেকে কবে যে মুক্তি পাব বুঝতে পারি না।
পাকিস্তানকে সংক্ষেপ করতে যদি পাক বানানো হয় সেই সংক্ষেপের মানে পাকিস্তানের পাক না হয়ে একসময় আল্লাহ, রসুল, কোরআনের পাকে পরিণত হয়ে যেতে পারে। ‘পাক’ অর্থ পবিত্র। আমরা যদি পাকিস্তান লেখার কষ্ট করতে না পারি তাহলে শতবর্ষ পরে পাক হানাদার বা পাক বাহিনী পবিত্র বাহিনী নয় সেটা কষ্ট করে কে আবিষ্কার করবে? আপনা আপনি তারা ভালো বাহিনী, পবিত্র বাহিনীতে পরিণত হয়ে যাবে। আসলে সময়টা বড়ই খারাপ।
এ সময় স্বাভাবিকভাবে কেউ কোনো কিছু দেখছে না। জানি না ভবিষ্যৎ কী হবে? সেদিন আবার ভারতীয় কোনো মন্ত্রী জঙ্গিবাদ দমনে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশকে এক হয়ে এগোতে বলেছেন। বলা যত সোজা রক্তের দাগ মোছা তত সোজা না। রক্তবিধৌত পবিত্র বাংলাদেশে অবশ্যই কিছুটা শিথিলতা এসেছে, দেশপ্রেমে ক্লান্তি দেখা দিয়েছে, সত্য স্বীকারে অনীহার ভাব প্রবল। তার পরও বাংলাদেশ, বাংলাদেশের অন্তরাত্মা কখনো পাকিস্তানের সঙ্গে বিলীন হয়ে যাবে না।
পাকিস্তানের জনগণকে সম্মানের চোখে দেখলেও পাকিস্তানি শাসক এবং শোষকদের ঘৃণা ছাড়া এ ভূখণ্ডের মানুষের কাছে আগামী হাজার বছর অন্য কিছু পাবে না। পাকিস্তানি খেলোয়াড়, শিল্পী ও একে ওকে দেখে আমাদের যুবক-যুবতীদের হাততালি পেয়ে এটা ভাবার কারণ নেই যে, পাকিস্তানি শোষকের নির্মম অত্যাচার বাঙালি মানসপট থেকে মুছে গেছে।
প্রবাদ আছে, আলেমের ঘরে জালেম হয়। আমাদের ঘরেও দু-চার জন কুলাঙ্গার হতেই পারে। তার জন্য এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, আমাদের জাতীয় সভ্যতা-ভব্যতার ভিত দুর্বল হয়ে গেছে। হাজার বছরে আমাদের সভ্যতাকে কেউ ভেঙে খানখান করতে পারেনি। এখানে ওখানে নিশ্চয়ই আঁচড় লেগেছে। কিন্তু তার পরও মোগল-পাঠান-ইংরেজ-সুলতানি আমল কোনো কিছুই আমাদের গ্রাস করতে পারেনি।
বরং আমরাই অনেককে বুকে ধারণ করেছি। প্রিয় কবি মাইকেল মধুসূদন কিছুটা ইংরেজ হওয়ার চেষ্টা করেও পরে বাঙালি হয়ে পরপারে গেছেন। তাই ইতিহাসে এসবের প্রমাণ দিতে খুব বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। এত ঝড়-তুফান অতিক্রম করে শত ভুলত্রুটির পরও আমরা যখন দাঁড়িয়ে আছি তখন বাংলাদেশ ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য নয়, টিকে থাকার জন্য এসেছে।
লেখক : বর্ষিয়ান রাজনীতিক
১২ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি