শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ০১:২৯:০৪

প্রাণে বেঁচে ফেরা এক সাংবাদিকের বর্ণনায় লঞ্চের নারকীয় কাণ্ড

প্রাণে বেঁচে ফেরা এক সাংবাদিকের বর্ণনায় লঞ্চের নারকীয় কাণ্ড

‘রাত ৩.০৮ মিনিটে মানুষের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি পিছনের দিকে আগুন আর আগুন। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। শত শত মহিলারা শিশু বাচ্চাদের কোলে নিয়া ছোটাছুটি করতেছে। তখন সিঁড়িতে আগুন জ্বলতেছে। আমিও হতাশ হয়ে ছোটাছুটি শুরু করি’।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনার অভিযান-১০ লঞ্চের আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা দেন প্রাণে বেঁচে ফেরা এক যাত্রী সাংবাদিক সানাউল্লাহ।

প্রাণে বেঁচে ফেরা আর এক যাত্রী সাংবাদিক সানাউল্লাহ বলেন, ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে আমি এই লঞ্চটিতে যাচ্ছিলাম। লঞ্চটি ছাড়ার পর চালকের মধ্য থেকে একজনকে বলতে শুনেছি, স্যার ইঞ্চিন ৪০০ তে, স্পিড ১১.৯-১২। তখন কিছু বুঝিনি।

তিনি বলেন, এর পর ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩.০৮ মিনিটে মানুষের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি পিছনের দিকে আগুন আর আগুন। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। শত শত মহিলারা শিশু বাচ্চাদের কোলে নিয়া ছোটাছুটি করতেছে। তখন সিঁড়িতে আগুন জ্বলতেছে। আমিও হতাশ হয়ে ছোটাছুটি শুরু করি। স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানাই এবং সবাইকে জানাতে বলি, আর বিদায় নেই। তখনই মাথাটা একটু খাঁটিয়ে নিলাম। এই সময় হতাশ হলে চলবে না। সব গুছিয়ে নিলাম। সামনের দিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছি।  মানুষের কান্না,আহাজারি,দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পরিনি। নামব কীভাবে সে প্লান খুঁজছি।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ৩টা ১৩-১৫ মিনিটে লঞ্চটিকে চরভাটারাকান্দা নামক এলাকায় ভিড়ানো হয়। কিন্তু পাড়ে মাটি না থাকায় লঞ্চ ধাক্কা খেয়ে পিছনে চলে যায়। তখন অনেকে বলছে- ভিড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রশিটা দিয়েন। কিন্তু মানুষ তো জাতে বাঙালি। রশির ওপরে সব। রশি আর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তখন রশিটা দিতে পারলে হয়ত এতটা প্রাণহানি ঘটত না। কিছু মানুষ তখন লাফ দিয়ে নামতে সক্ষম হয়।

সাংবাদিক সানাউল্লাহ বলেন, বুদ্ধি করে নামাজের স্থানে টানানো রশিটা নিলাম। মোটা করে সাজিয়ে মধ্যে গিট্টু দিয়ে রেলিং বেধে তৈরি হলাম। এর মধ্যে  নিচতলা থেকে অনেকের চিৎকার শুনতে পাই। লঞ্চ তখন নদীর মাঝখানে। তখন রাত্র ৩টা ৩০ মিনিট ওভার। এরই মধ্যে বাম দিকে তাকিয়ে দেখি কিনারা দেখা যায়। অর্থাৎ দিয়াকুল। রশি নিয়ে তৈরি। ঠিক ৩.৩৫ সময় একদম লঞ্চটি কিনারে। তখনও বলা হয় রশি দিতে। এখন আর সময় করা ঠিক হবে না। কারণ গ্যাসের কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। লঞ্চ পুনরায় ছুটে যেতে নিছে। পায়ের নিচটা গরম হয়ে আসছে। রশিটা ধরে একদম নিচতলায়। যতটা পারছি কয়েকজনকে সাহায্য করেছি। এর পর নদীর কিনারায় ঝাঁপ দেই।

তিনি বলেন, কিনারায় আসার পর জানতে পারলাম আগুন লাগার কারণ।

সাংবাদিক সানাউল্লাহ বলেন, লঞ্চটিতে নতুন একটা ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনে সমস্যা ছিল। গ্যাস জমে। বুধবার ঢাকার ঘাটে ৪ জন ইঞ্জিনিয়ার এসে সেরেছে। তারা যখন বলছে ইঞ্জিন ওকে, তখন তারা ট্রিপের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু লঞ্চে একজন ইঞ্জিনিয়ার থেকে যায় দেখার জন্য এবং মালিকও লঞ্চে ছিলেন। ইঞ্জিন চলতি অবস্থায় বহুবার অস্বাভাবিক শব্দ করলেও কোনো নিয়ন্ত্রণ করেননি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এরপরই দুর্ঘটনা ঘটে। সূত্র: যুগান্তর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে