শনিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:০৪:১৮

ভারত-বাংলাদেশ পারমাণবিক চুক্তি হচ্ছে

ভারত-বাংলাদেশ পারমাণবিক চুক্তি হচ্ছে

আবুল কাশেম : বাংলাদেশের সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি সই করতে আগ্রহী ভারত। এ জন্য দেশটির তরফ থেকে চুক্তির একটি খসড়া পাঠানো হয়েছে। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খসড়াটি পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ সরকার।

এ নিয়ে এরই মধ্যে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে, যেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা চুক্তি সই করার পক্ষেই মত দিয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর লিখিত মতামত সংগ্রহ করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

‘অ্যাগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অন কো-অপারেশন ইন দ্য পিস্ফুল ইউজেস অব নিউক্লিয়ার এনার্জি’ শিরোনামে ভারত সরকারের পাঠানো খসড়ায় ৪০ বছর মেয়াদে চুক্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

চুক্তির খসড়ায় ১৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে বলে জানা গেছে। পরে চুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানোর সুযোগ রেখে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে ১০ বছর মেয়াদে এ চুক্তি করার কথা ভাবছে।

জানা যায়, ভারতের পাঠানো চুক্তির খসড়া নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খানের সভাপতিত্বে গত ৬ জানুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খসড়া চুক্তির বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে লিখিত অভিমত চাওয়া হয়েছে। ওই সভার কার্যবিবরণী বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মতামত পাঠিয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের মতামত পাওয়ার পর খসড়া চুক্তি নিয়ে ভারতের ‘ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি’র সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হতে যাচ্ছে। নতুন সদস্য হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পারমাণবিক শক্তির যথাযথ ব্যবহারের জন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহায়তা বাংলাদেশের প্রয়োজন।

ভারত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আণবিক শক্তির অন্যান্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর। প্রস্তাবিত সহযোগিতা চুক্তিটি পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।’

খসড়া চুক্তিতে ১৩টি অনুচ্ছেদ থাকার কথা উল্লেখ করে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বসাক জানান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রণীত গাইডলাইনের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

ভারতের সঙ্গে চুক্তি হলে বাংলাদেশের পারমাণবিক অবকাঠামো উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও দক্ষ জনবল তথা পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।

জানা যায়, খসড়া চুক্তির ১৩টি অনুচ্ছেদের কোনো কোনোটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের। খসড়ার ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (মেধাস্বত্ব) শীর্ষক প্যারার প্রথম লাইনে ‘দেশের অভ্যন্তরীণ আইন’-এর কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কপিরাইট সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) থেকে অনেক বিষয়ে ছাড় পেয়ে থাকে, যা ২০২১ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ তথ্য উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, খসড়ায় অভ্যন্তরীণ আইনের পাশাপাশি ‘আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধ’ মেনে চলার কথা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চুক্তিতে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশের সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য পরিবেশ সুরক্ষায় খসড়ার ২ নম্বর অনুচ্ছেদে ভিন্ন একটি উপ-অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। খসড়া চুক্তির ১৩(৩) অনুচ্ছেদে ৪০ বছর মেয়াদে এই সহযোগিতা চুক্তি সই করার প্রস্তাব করেছে ভারত।

চুক্তিটি প্রাথমিকভাবে ১০ বছর মেয়াদে করা সমীচীন হবে জানিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ভবিষ্যতে এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এ ছাড়া খসড়ায় ‘থার্ড পার্টি স্টেট’ বা তৃতীয় রাষ্ট্রপক্ষ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। ‘থার্ড পার্টি স্টেট’ বলতে ভারত কী বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি।

এসব বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অবশ্য গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খসড়াও আমার কাছে নেই। না দেখে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়।’

বর্তমান সরকারের নেওয়া রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এই ২০ হাজার মেগাওয়াটের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পাবনা জেলার রূপপুরে প্রতিটি এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মিলিয়ে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাশিয়া সরকারের সহযোগিতায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক সামরিক শক্তির অধিকারী। পরস্পরের বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার না করার বিষয়ে ১৯৮৮ সালে তিন বছর মেয়াদি চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। পরে তা আরো তিন বছর মেয়াদে নবায়ন করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার ভারত সফরের সময় দেশ দুটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তিতে সই করে।

যদিও শ্রীলঙ্কার কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। ওই চুক্তিতে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, সম্পদ বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জনবলের প্রশিক্ষণ, রেডিওআইসোটোপস ব্যবহার, পারমাণবিক নিরাপত্তা, রেডিয়েশন নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া রেডিওঅ্যাক্টিভ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পারমাণবিক ও রেডিওলজিক্যাল দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে ওই চুক্তিতে। - কালেরকণ্ঠ

১৬ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে