নিউজ ডেস্ক : কত স্বপ্ন ছিল ওদের, কিন্তু সব স্বপ্ন মুছে গেল বাসের চাকায়। সাবিহা আক্তার ছিল বাবা-মা আদরের সন্তান। আদর করে ডাকতেন সোনালী। এ বছর জেএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল সে। স্বপ্ন ছিল নামকরা কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার।
রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি গার্লস স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায় সে। সকালে গণপূর্ত অধিদফতর কলোনির বাসা থেকে নতুন স্কুলে ভর্তির জন্য বের হয় সোনালী। রাস্তা পার হতেই যন্ত্রদানব বাসের চাপায় মুহূর্তেই মুছে যায় সোনালীর সব স্বপ্ন। আজ শনিবার সকালে হাইকোর্ট সংলগ্ন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সামনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটনায় মারা যায় সে।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিকেলে শিশু পার্কের সামনে রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় খাদিজা আক্তার মিতু (১২) নামের আরেক ছাত্রী। খাদিজা এবার পিএসসিতে এ প্লাস পেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে এসে লাশ হয়ে ফিরলো সে।
জানা গেছে, সেগুনবাগিচার বেগম রহিমা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পাস করেছিল সোনালী।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সেগুনবাগিচার রহিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা মৎস্য ভবনের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভে অংশ নেয় স্থানীয়রাও।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা প্লেকার্ড নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। তাতে লেখা ছিল, ‘আর কত সোনালীকে আমরা হারাবো’, ‘আমরা নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা চাই’, ‘আমরা আর কোনো সোনালীকে হারাতে চাই না’।
পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
পুলিশ জানায়, সোনালীকে চাপা দেয়া বাসটিকে আটক করা গেলেও চালক পালিয়েছে। শিশুপার্কের সামনের রাস্তায় খাদিজাকে চাপা দেয়া বাস ও তার চালক সাহিন হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮টার দিকে বার কাউন্সিলের সামনে থেকে বাসে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল সোনালী। এ সময় বেপরোয়া গতির ৮ নম্বর পরিবহনের একটি বাস তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সোনালী রাস্তায় পড়ে গেলে বাসের পেছনের চাকা তার ওপর তুলে দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যায় সে।
রাস্তাতেই পড়েছিল সোনালীর মগজ ও রক্তাক্ত দেহ। পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ভর্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। খবর পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে আসেন সোনালীর বাবা-মা। মেয়ের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। তাদের আর্তনাদে হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
সোনালীর সহপাঠীরা জানায়, শুধু পড়াশোনায় নয়, গান, সেলাই, খেলাধুলায় সোনালী প্রথম হতো। প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুষ্ঠান হলে গান গাইত সে। সেলাই স্কুলে প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে একটি সেলাই মেশিন পেয়েছিল।
সোনালীর বাবা জাকির হোসেন জানান, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ছিল। সাজ্জাদ নরসিংদী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে। আর মেয়েটি গোল্ডেন এ পেয়েছিল। কিন্তু সব কেড়ে নিল বাস।
এদিকে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় খাদিজা আক্তার মিতু। বড় বোনের সাথে বেড়াতে এসে যন্ত্রদানবে কেড়ে নিল মিতুর প্রাণ। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ।
জানা গেছে, মিতুর বাবার নাম বাচ্চু মিয়া। তিনি আবুধাবি প্রবাসী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনহরগঞ্জের মান্দআরা গ্রামে।
মিতুর বড় বোন আয়শা বেগম জানান, গত ১২ জানুয়ারি শ্যামপুরে তার বাসায় বেড়াতে আসে মিতু। বিকেলে তার স্বামী ওমর ফারুক ছোট বোন মিতুকে নিয়ে শিশু পার্কে বেড়াতে আসেন। বিকেল ৪টার দিকে পার্কের গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস তার বোনকে চাপা দেয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনার পর বাস দুটি ও এক চালককে আটক করা হয়েছে। অপর চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে সোনালীর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মিতুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
১৬ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম