রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:১৮:৪৮

বিএনপিতে ভাঙ্গনের গুঞ্জন

বিএনপিতে ভাঙ্গনের গুঞ্জন

মাহমুদুল হাসান, : দল পুনর্গঠন বা সাংগঠনিকভাবে দলকে গুছিয়ে নেওয়ার আগেই আবার ভাঙ্গছে বিএনপি। ভাঙ্গনের এ গুঞ্জন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। দলের ভেতরে এ নিয়ে নতুন করে নানা কথা শোনা গেলেও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

মামলার চাপে কারাগারে থাকা, আত্মগোপনে থাকা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে না পারা এবং এসব কারণসহ নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে স্বার্থে অনেকেই বিএনপি থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।

একাধিক দুর্নীতি মামলার আসামি দলের একজন সিনিয়র নেতা যিনি সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে আপোস করে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে কথিত রয়েছে; তার নেতৃত্বেই বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী নেতাদের যোগসাজশ করে তিনি দল ভাঙ্গার চেষ্টা করছেন —এমনটি-ই জানা গেছে।

এ প্রক্রিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের বিশেষত পঞ্চগড়, বরিশাল, রাজবাড়ী জেলার নেতাদের নাম শোনা যায়। এ ছাড়াও নাম এসেছে এক আইনজীবী নেতার। সরকারের সঙ্গে সমঝোতাকারী দলের এ ভাঙ্গনপন্থী নেতাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপিকে কিংবা দলের একটি অংশকে আগামী নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি ভাঙ্গবে না। আমার মতে, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত পার্টি। সারা বাংলাদেশে বিএনপির একটা সুনাম আছে। বর্তমানে আমরা কিছুটা পিছপা হয়েছি বটে, কিন্তু বিএনপির যখন পাওয়ারে ছিল তখন গুড গভর্নেন্স দিয়েছে। তাই এ দল ভাঙ্গবে বলে আমরা মনে হয় না।’

বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া আর্মি ব্যাক পাওয়ার পেয়েও কিছু করতে পারেননি বলেও দাবি করেন জাতীয় সংসদের সাবেক এই স্পিকার।

আবার দলের কেউ কেউ বলছেন, কেউ বিএনপি থেকে বের হয়ে ‘শর্টকাট’ কিছু করতে চাইলেও আলাদা পার্টি করে তেমন সুবিধা করতে পারবে না। ফলে কেউ যদি দলে থেকে বের হযে যায় তাতে বিএনপিতে তার প্রভাব পড়বে না।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের লক্ষ্যে টানা ৯২ দিন আন্দোলন করেও কোনো সুফল পায়নি বিএনপি। তার আগে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিএনপি। কিন্তু যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। এ বছর ৫ জানুয়ারি ঘিরে আন্দোলনের পরিকল্পনা না করে সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দলটি।

আন্দোলন করে সরকার পতনের আশা ছেড়ে দিয়ে দলের হাইকমান্ড এখন সিনিয়র নেতাদের দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দিতে বলেছেন। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে নতুন করে গঠন ও শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে এখন ‘হোম ওয়ার্ক’ চলছে।

এর মধ্যে দল থেকে একটি গ্রুপ বের হয়ে নতুন করে দল গঠন পরিকল্পনা করছে— এমন গুঞ্জন উঠেছে এবং এ তথ্য ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছেছে।

আর এমন গুঞ্জন যে একেবারেই অমূলক নয়, তা দলের নেতাদের বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে। গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীতে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ার কারণে তারা এখন অন্য একটি রাজনৈতিক দল বা জোটকে ভেঙ্গে ফেলছে। দলটি গণতন্ত্রকে বিকশিত না করে বরং রাজনৈতিক দল ও জোটকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করছে।’

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, ‘এটা প্রপাগান্ডা। টোটালি ফেইক। আমরা বেগম জিয়ার সঙ্গে আছি। তাকে ছাড়া বাংলাদেশে কিছু করার সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেনারেল মাহবুবুর রহমান, আব্দুল মঈন খান, মোশাররফ হোসেনসহ যাদের নাম বলা হচ্ছে— আসলে তারা এর সঙ্গে জড়িত নয়। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।’

দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘একটা গ্রুপ আছে, যারা সব সময় সক্রিয়। এরা বলে বিএনপি নাই। বিএনপি আছে জনগণের অন্তরে।’ তবে, হ্যাঁ, বিএনপি ভাঙ্গার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে’, যোগ করেন তিনি।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠজন এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি সমাবেশের এক দিন পর মির্জা আব্বাস (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক) আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে কারাগারে গেলেন। এর আগে গেলে কী হতো? তিনি হয়তো মনে করছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) ঢাকা মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি তাড়াহুড়া করে জামিন চাইতে আদালতে গেলেন। এতে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।’

এ বিষয়ে মির্জা আব্বাসের এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘এগুলো প্রপাগান্ডা। যতই প্রপাগান্ডা করুক না কেন এতে কোনো লাভ হবে না। আব্বাস ভাইয়ের সম্মতিতেই দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) ৫ জানুয়ারি সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন।’

বিএনপির সূত্র জানায়, যারা দল ভাঙ্গতে পারেন এমন নেতাদের উপর নজরদারি রয়েছে। তারা কে কোথায়, কবে কখন, কার সঙ্গে বৈঠক করছেন, তাদের গতিবিধিও লক্ষ রাখা হচ্ছে। এগুলো খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হচ্ছে।

উল্লেখ, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের যোগসাজশে দলের মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা আলাদা বিএনপি গঠনের চেষ্টা করে। কিন্তু খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মতো বিশ্বস্ত নেতাদের হাত ধরে বিএনপি শেষবারের মতো ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পায়। পরে খালেদা জিয়া ও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দলটি আবারও ঘুরে দাঁড়ায়। -দ্য রির্পোট
১৭ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে