বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার দুই জন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) চেয়েছেন। এখনও বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চলছে তিনটি এমআরপি দেয়া নিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি।
পাসপোর্ট দেয়া বা না দেয়ার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, তাদের পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজনৈতিক পরিবারের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে থাকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যা এমআরপি’র জন্য আবেদন করেন। বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও পাসপোর্ট প্রিন্ট করার আগে দেখতে পায় বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পরিবারের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়।
এরপর পাসপোর্ট অধিদপ্তর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এমআরপি দেয়ার বিষয়টি অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির জন্য পাঠায়। চিঠি পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য পাঠায়। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও এসবি’র মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
যার ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৪৪.০০.০০০০.০৩৮..০১.০০৪.১৪/২৩৫৯, তারিখ ২৪/০৮/২০১৫ এর মাধ্যমে শর্মিলা রহমান ও দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়াকে পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে মতামত দিতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র কাছে বিষয়টি সম্পর্কে মতামত দেয়ার জন্য আলাদা আরেকটি চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও- এর কাছে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে পাঠায়। গত ৭ই সেপ্টেম্বর প্রধান কার্যালয়, ঢাকা স্মারক নং- কর্ড-১/১০২/২০১১/১৩৬৭(১)- এর মাধ্যমে ‘আরাফাত রহমান এর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদান প্রসঙ্গে’ শিরোনামে মতামত চাওয়া হয়। এরপর ৯ই সেপ্টেম্বর বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক এ.টি.এম আবু আসাদ স্মারক নং- বিপাওভিঅ-১/২০৪/২০১৫/৭০২ এর মাধ্যমে ফিরতি চিঠিতে মহাপরিচালকের কাছে মতামত পাঠান।
মতামতে তিনি জানান, বিষয়ে বর্ণিত আবেদনকারীরা রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সে কারণে তাদেরকে পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অত্র অফিসে দাখিল করা রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আরও অনেক আবেদনপত্রের অনুকূলে পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্ণিত আবেদনকারীদের এমআরপি দেয়ার জন্য প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়।
এটা আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো। এর ভিত্তিতে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক (পাসপোর্ট ও পরিকল্পনা) একেএম মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আরাফাত রহমানের স্ত্রী ও দুই কন্যার অনুকূলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রদানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদয় সিদ্ধান্ত চাওয়ার বিষয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও, ঢাকা থেকে পাওয়া মতামত মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য পাঠানো হলো।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসবি বিষয়টি সম্পর্কে দুয়েক দিনের মধ্যে তাদের মতামত পাঠাবে। এরপরই বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর আরাফাত রহমান কোকোকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে আটক থাকাবস্থায় কোকো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে প্যারোলো মুক্তি পেয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককে যান।
সঙ্গে যান স্ত্রী শর্মিলা রহমান, বড় মেয়ে জাফিয়া রহমান ও ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান। পরে পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে চলে যান কোকো। এরপর থেকে সেখানে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। চলতি বছরের ২৪শে জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কুয়ালালামপুরের একটি হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান কোকো। গত ২৭শে জানুয়ারি কোকোর লাশের সঙ্গে দেশে আসেন স্ত্রী ও দুই কন্যা। স্কুল খোলা থাকায় সপ্তাহখানেক পরেই মায়ের সঙ্গে মালয়েশিয়া ফিরে যায় জাফিয়া-জাহিয়া। বর্তমানে তারা দাদির সঙ্গে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।-এমজমিন
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে