বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:৩২:৩৭

খায়রুল হকের রায়ের নেপথ্যে টাকা আর চাকুরি : রিজভী

খায়রুল হকের রায়ের নেপথ্যে টাকা আর চাকুরি : রিজভী

ঢাকা : সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বতর্মানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক চিকিৎসার টাকা ও চাকরি পাওয়ার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে করে রায় দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালে খায়রুল হক প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়েছিলেন। এছাড়া অবসরে যাওয়ার পর আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে তাকে নিয়োগ দেয় সরকার।

রিজভীর অভিযোগ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘৭৫ এর একদলীয় দুঃশাসনের ব্যর্থ বাকশালের ফেলে যাওয়া জুতা পুনরায় আওয়ামী শাসকদলের পায়ে গলিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক।

রিজভী বলেন, এটা ছিল আবারো নিষ্ঠুর নির্দয় গণতন্ত্রধ্বংসকারী একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্রের উলঙ্গ রূপ। যেটি আবারো জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বক্তব্যে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান 'অবৈধ প্রধানমন্ত্রী' মনে করেছিলেন-তার দন্ডায়মান দৃপ্ত হুংকারের ভয়ে সেদিনের সংবিধান, গণতন্ত্রবিনাশী বিচারপতি খায়রুল হকের অপকীর্তির বিষয়ে কেউ কথা বলতে সাহস করবে না।

রিজভী বলেন, এই সরকারের হিংস্র আক্রমণে যাদের রক্ত ঝরছে, যারা নির্যাতিত হচ্ছেন, যাদের জীবিকা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, যারা বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী, যারা অসংখ্য মামলা নিয়ে পরিবার পরিজন ত্যাগ করে এলাকা থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন তারা যেন ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রবল প্রতিরোধ করতে না পারে সেজন্যই বিচারপতি খায়রুল হকের মাধ্যমে দ্বিতীয় টার্মের বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করানো হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানে সংযোজনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে বাকশাল করার জন্যই সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকার নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক দেখানোর জন্য নির্বাচন নিয়ে খেলা খেলেছেন। তারা স্থানীয় সরকারের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ভোট কেড়ে নিয়েছে।

গণতন্ত্র নিখোঁজ ও খুন করা হয়েছে এমনটাই অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ মাদ্রাসা ছাত্রদের আন্দোলনে আক্রমন চালালে একজন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয় এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। যা দেশবাসী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিবাসীগণ প্রত্যক্ষ করেছেন।

অথচ সরকার এই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন জহির এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ ৪৪ জন নেতাকর্মীর নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে নির্দয় নিপীড়ন নির্যাতন ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে, যে ঘটনার সাথে বিএনপি বিন্দুমাত্র জড়িত নয়।

রিজভীর অভিযোগ, তাদেরকেই সরকারী প্রশাসন মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভয়ানকভাবে হয়রানী করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন বিএনপি নিধন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তাদেরকে প্রেস কনফারেন্স পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। এটি সরকারের জুলুম ও উৎপীড়নের আরেকটি ভয়াবহ রূপ।

তিনি বলেন, রাজশাহী জেলার তানোর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও তানোর থানা জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি মিজানুর রহমানকে বুধবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানস্থর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক তাকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা প্রমাণ করে সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বরাবরের মতোই বাঁকা পথে হাঁটা অব্যাহত রেখেছে।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমি এধরনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোপ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তানোর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমানের নিঃর্শত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

আসলে গুন্ডামীর শাসনে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার থাকে না। ভোটারবিহীন সরকারের মখমলের গদি সবসময় টলটলামান থাকে। যার কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তারা বিপজ্জনক মনে করে।

যেহেতু অবৈধ আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন, তাই আওয়ামী সন্ত্রাসী গুন্ডাবাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও দমন-পীড়নই তাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায়।

তিনি বলেন, বর্তমান দখলদার সরকারের মহা দুর্নীতি হাতে কলমে প্রমাণিত, বিচারবহির্ভূত মানুষ খুন, বেআইনি গুম ও নিখোঁজের ধারাবাহিক ঘটনা সরকারের প্রতিদিনের কর্তব্যকর্ম।

রিজভী বলেন, নির্বাচন, ভোট, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করা হচ্ছে-মাঝে মাঝে সন্ত্রাসী ও প্রহসনের স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটু স্টিম ছেড়ে দেয়ার মতো নিজেদের গণতন্ত্রী দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন,  আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
২১ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে