শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৬, ১০:১০:১২

‘বেদখল হচ্ছে ডেসটিনির সম্পদ, বিনা বিচারে কারাগারে রফিকুল আমিন’

‘বেদখল হচ্ছে ডেসটিনির সম্পদ, বিনা বিচারে কারাগারে রফিকুল আমিন’

জুবায়ের রাসেল: দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং জমির উল্লেখযোগ্য একটা অংশ বেদখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটাররা। তারা বলছে, একদিকে বেদখল হচ্ছে ডেসটিনির সম্পদ, অন্যদিকে বিনা বিচারে কারাগারে দিন পার করছেন রফিকুল আমিন। অথচ পুলিশ সেই সম্পদ উদ্ধারে বরাবরই উদাসীন। পাশাপাশি নিজেদের তত্ত্বাবধানে থাকা বাকি সম্পদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ। অবশ্য পুলিশের দাবি, বেদখল সম্পদ উদ্ধার-প্রক্রিয়া চলছে।

ডেসটিনি তার ডিস্ট্রিবিউটারদের কাছ থেকে ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে বিদেশে পাচার করেছে কয়েকটি পত্রিকার এমন ভিত্তিহীন প্রতিবেদনের জের ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

এরপর ২০১৪ সালের মে মাসে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এ প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী বলেন, ‘আমাদের শুনানি শেষ হয়েছে। আশা করি, শিগগির বিচার শুরু হবে।’

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানির অর্থ পাচার মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর (জেলখানার হিসাবে ৪৫ মাস) সঙ্গে অর্থ জরিমানা বা উভয় জরিমান। অথচ ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রায় ৪৬ মাস ধরে কেন জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাহলে কি দায়েরকৃত মামলার কোন ভিত্তি নেই?-এমন প্রশ্নের জবাবে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি ওই আইনজীবী।

অন্যদিকে, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর ডেসটিনির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়ে পুলিশকে এর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। সে অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রাজধানীর বাইরে ডেসটিনির সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন।

আদালতে পুলিশের জমা দেওয়া প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, এমএলএম কোম্পানিটির ৮১টি গাড়ি, ১৬টি ফ্ল্যাট বেদখল, ১৯টি জমির ৯টি এবং ১৪টি স্থাপনাসহ ৩টি জমি দুর্বৃত্তরা দখল করে নিলেও তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
 
ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে ডেসটিনির সম্পদ দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ডেসটিনির সকল সম্পদ আমরা হেফজত করছি। যেগুলো দুর্বৃত্তরা দখল করেছে সেগুলোও আদালতের নির্দেশ উদ্ধারের চেষ্ট করা হচ্ছে। আয় ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে তিনি বলেন, আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়া হয়েছে। অন্যগুলোর বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে ডেসটিনির কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান বলেন, যে যেভাবে পারছে দখল করে খাচ্ছে ডেসটিনির সম্পদ। পুলিশ প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে না।
ডেসটিনির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী দুদক। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেন।

এ অবস্থায় দুদকের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ডেসটিনির সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব ডিএমপিকে দিয়েছেন আদালত। এ ক্ষেত্রে দুদকের কিছু করার নেই।

এদিকে, ডেসটিনির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির ৪৫ লক্ষ ডিস্ট্রিবিউটার কেউ কোন ধরণের অভিযোগ করেনি। বরং কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে রাজশাহীর এক ডিস্ট্রিবিউটার সোহেল রানা এমটি নিউজকে জানান, ‘ডেসটিনির মাধ্যমে আমরা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ নই, বরং উপকৃত। অথচ গুটি কয়েক পত্রিকার মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে আমাদের ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪৫ লাখ মানুষ যে কত কষ্টে জীবন পার করছে তা কিন্তু ওই সকল পত্রিকা কখনোই তুলে ধরেনি।’

৪৫ লাখ ডিস্ট্রিবিউটারের কোন অভিযোগ নেই উল্লেখ করে শরিয়তপুরের ডিস্ট্রিবিউটার সুলতান মাহমুদ এমটি নিউজকে বলেন, ‘দুদুক কার অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের আয় বন্ধ করেছে তা আমার জানা নেই। আমরা কোন অর্থ ফেরত চাই না, আমরা ব্যবসার সুযোগ চাই। সরকারের কাছে ডেসটিনির ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

সাক্ষীরার ডিস্ট্রিবিউটার অমিত ভাট্টাচার্য এমটি নিউজকে বলেন, ‘কোম্পানির প্রতি আমাদের কোন অভিযোগ নেই, কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেনি বরং আমরা অর্থ বিনিয়োগ করেছি এবং প্রতি বছর লভ্যাংশ পেয়েছি। ডেসটিনির ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করে রাখার ফলেই আমরা বরং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। অথচ একদিকে বেদখল হচ্ছে ডেসটিনির সম্পদ, অন্যদিকে বিনা বিচারে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন রফিকুল আমিন।’

দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে নাটোরের ডিস্ট্রিবিউটার মো. মনির এমটি নিউজকে বলেন, ‘কোম্পানির প্রতি আমাদের কোন অভিযোগ নেই, আমরা ডেসটিনির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছি, আমরা পুনরায় ব্যবসা করতে চাই। আর এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন সময়ে ৪৫ লাখ ডিস্ট্রিবিউটারের পক্ষ থেকে দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। কিন্তু বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি।’

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে টেলিফোনে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি নেপালে আছেন। মামলাসহ নানা কারণে ডেসটিনির বিষয়টি খুব জটিল প্রকৃতির। তাই এই মুহূর্তে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।
২২ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জেএম/আরএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে