শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৯:৩৫:০২

শখের কবুতর পালনে বদলে গেছে যুবকের ভাগ্য

শখের কবুতর পালনে বদলে গেছে যুবকের ভাগ্য

নিউজ ডেস্ক : শান্তির প্রতীক কবুতর। জনশ্রুতি আছে, এক সময় কবুতরের মাধ্যমে চিঠির আদান-প্রদান করা হতো। ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক সেই কবুতর এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন শুরু হয়েছে।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করে শত শত বেকার যুবক তাদের ভাগ্য বদল করেছে। শখের কবুতর পরিণত হয়েছে অর্থ উপার্জনের উৎসে। বাড়ছে কবুতর ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সংখ্যা। হাট-বাজারের পাশাপাশি এখন কবুতর বিক্রির অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক ও ইন্টারনেট। কবুতর পালন করে দিন বদল করেছে নরসিংদীর পলাশের শতাধিক বেকার যুবক।

একই পেশায় শেরপুরের নকলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডাকাতিয়াকান্দা ও শিববাড়ী গ্রামের দুই দম্পতি সফলতা অর্জন করেছেন।

পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল চরপাড়া এলাকার অসিম বনীক জানান, বেকারত্ব জীবনে বছর দুয়েক আগে শখের বসে গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর বাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে দুই জোড়া দেশি কবুতর কিনে আনেন। এর পর কবুতর পালন করার জন্য আট খোপের একটি ঘরও তৈরি করেন। খোপগুলো পূরণ করার জন্য আরও ছয় জোড়া কবুতর সংগ্রহ করেন।

এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে কবুতরের বাচ্চা ও ডিম বিক্রি করে গড়েছেন বিশাল আকারের খামার। বর্তমানে মাস শেষে এই খামার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।

তার খামারে দেশীয় কবুতর ছাড়াও আমেরিকান হিটলার, ভারত, পাকিস্তান ও জাকার্তা থেকে আসা গ্রিবাজলস্কা, লোটন, সিরাজি, ময়ূরী, সিলভার, জিলানী, পরশ, শোয়া, চন্দন, ক্যাপটান, রেসার, বাজারিকা, মনিরা, কালদম, কিংসহ বিশ প্রজাতির বিদেশি কবুতর রয়েছে। এর মাঝে ২ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জোড়া মূল্যের কবুতর রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশি কবুতরের চেয়ে বিদেশি কবুতরের চাহিদা বেশি।

শেরপুরের নকলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডাকাতিয়াকান্দার মিজানুর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী শেফালী আক্তার এবং শিববাড়ীর মোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী সুইটি আক্তার পড়ালেখা শেষে চাকরি পাননি। ২০০৩ সালে একটি দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে কবুতর পালন করে বেকারত্ব ঘোচানোর পরামর্শ পান তারা। তারপর কৃষি ও প্রাণী বিভাগের পরামর্শে কবুতর পালন শুরু করেন। বর্তমানে তাদের খামারে ৩১ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। মোরশেদের ৪২ জোড়া দেশি, ১৮ জোড়া বিদেশি এবং মামুনের ২৯ জোড়া দেশি, ৩৫ জোড়া বিদেশি কবুতর রয়েছে। বিদেশি কবুতরগুলোর মধ্যে কিং, ম্যাগপাই, রেচিং, বাগদাদী, হোমার, সিরাজী, ঘিরিবাজ, নান, শর্টপীচ, টগা, ছোঁয়া চন্দন, পারভীন, কাপতান, রেন, কাজী, গিয়াছলী, লক্ষা, ঝর্ণা সাটিং ও হাইব্রিট ক্রস উল্লেখযোগ্য।

মামুন জানান, গেল বছর সব খরচ বাদে তার খামার থেকে লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন তারা। মোরশেদের দেয়া তথ্য মতে, একজোড়া দেশি কবুতরের ক্রয়মূল্য ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং বিদেশি কবুতরের ক্রয়মূল্য আড়াই হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। শেফালী ও সুইটি জানান, স্বামীর অবর্তমানে তারাই সবকিছু দেখভাল করেন। ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান সোজা বলেন, মোরশেদ ও মামুন দম্পতিরা শুধু ইউনিয়ন নয়, উপজেলার মডেল। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ এবং মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা তাসনিম বলেন, কবুতর পালনের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ শহিদুল আলম জানান প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
২২ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে