বাড়িতে বাবার লাশ, কাঁদতে কাঁদতে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গেলেন সানজিদা

এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের পর বাবার সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবেন ও বাড়ি ফিরবেন তার সাথেই এমন ইচ্ছা ছিল সানজিদা আক্তারের। পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন বেশ ভালো। গত ৬ নভেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলেও সানজিদার সেই সৌভাগ্য হয়নি। কারণ তার বাবা শামীম আল মামুন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শনিবার (১২ নভেম্বর) রাতে মারা যান। রবিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে শোকে পাথর স্বজনেরা যখন লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষায় অংশ নিতে যান সানজিতা। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সানজিদার বাবা মৃত শামীম আল মামুন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বাইমাইল গ্রামের মৃত ছোরহাব হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন দলিল লেখক।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সানজিদা ছোট। তিনি শহরের সরকারি কুমুদিনী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।  শহরের সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে রবিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

তার বড় ভাই ইমরান হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর তার বাবা শামীম আল মানুষ পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের একটি ক্লিনিকে চার দিন চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার অপারেশন করা হলেও তার আর জ্ঞান ফিরেনি। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

রবিবার সকালে বাইমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাযায় দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাবু, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হেলাফ ফকিরসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

সানজিদা আক্তার বলেন, 'আমি বাবাকে খুব সম্মান ও ভালোবাসতাম। তাই তার নির্দেশনা মোতাবেক মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতাম। আমার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। '

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাবু বলেন, 'বিষয়টি খুব হৃদয় বিদারক। একদিকে বাবা হারানোর শোক অন্য দিকে পরীক্ষা। সানজিদার বাবার আত্মার মাগফিরাত ও সানজিদার জন্য দোয়া রইল। '