সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৮:৩৩:০১

ভাগ হচ্ছে পাঁচ বড় মন্ত্রণালয়

ভাগ হচ্ছে পাঁচ বড় মন্ত্রণালয়

শিমুল: কাজের গতি বাড়াতে পাঁচটি বড় মন্ত্রণালয় ভাগ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, স্থানীয় সরকার এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন। প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়গুলোকে ভাগ করে প্রতিটিতে করা হচ্ছে দুটি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। এ জন্য সৃষ্টি করা হবে সচিবের পাঁচটি নতুন পদ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগের জন্য একজন করে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।’

এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আরও গতিশীল করতে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনাও রয়েছে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সংস্কার ও সমন্বয়) কাজ করছে। শিগগিরই এটি প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। সচিব কমিটির সুপারিশ নিয়ে পর্যায়ক্রমে মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভাজন করে নতুন নামকরণ করতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাব উঠবে। প্রস্তাব পাস হলে জারি হবে প্রজ্ঞাপন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষাসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি বেড়েছে। এ ধরনের কাজ মন্ত্রণালয়ের একটিমাত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে করা সহজসাধ্য নয়। তাই কাজের চাপ কমিয়ে আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বিভাজন করা হবে। মন্ত্রণালয় বিভাজন হলে কাজও ভাগ হয়ে যাবে। তখন নির্দিষ্ট সময়ে সবকিছু বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, এখনও নির্দিষ্ট সময়ে কর্মকর্তা সম্পন্ন হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে কর্মকর্তাদের ওপর বেশি চাপ পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, প্রথমে শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভাগ হয়ে চারটি বিভাগ হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য তিনটি মন্ত্রণালয় ভাগ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বিভাজনের সিদ্ধান্ত রয়েছে- এমন কথা তিনি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তার কাছে কোনো প্রস্তাব আসেনি। কারণ, এ কাজগুলো করবে মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগ। পদ সৃষ্টির বিষয়টি করবে তার মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সংস্কার ও সমন্বয়) সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বিভাজনের বিষয় নিয়ে তার বিভাগের বিধি ও অনুবিভাগ কাজ করছে। এটি করতে হলে প্রথমে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধন করতে হবে। কারণ, এখানে মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মবণ্টন একীভূত। আলাদা বিভাগ হলে আলাদাভাবে কর্মবণ্টন করতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাবনা এলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে বিভাজনের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভাজন করে প্রথমে তিনটি বিভাগ করতে বলা হয়েছিল। বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আপাতত দুটি বিভাগ হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। তার মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও অধিদপ্তর। এ বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। এর বাইরে হবে উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ বিভাগের দায়িত্বেও একজন সচিব থাকবেন। তবে পুরো মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রীর পাশাপাশি এক বা একাধিক প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া যাবে।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হবে দুটি বিভাগ। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনা ও তদারকিতে থাকবে একটি বিভাগ। রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও অন্য বিভাগ পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। দুই বিভাগে দু’জন সচিব দায়িত্ব পালন করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকবে ওই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। নিয়ম অনুযায়ী তাদের আর্থিক বিভাজনসহ সব ধরনের কাজ করবেন ওই বিভাগের সচিব।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও ভাগ করে দুটি বিভাগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, অন্যটি পরিবারকল্যাণ বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছু থাকবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে। আর পরিবারকল্যাণ কার্যক্রমে গঠিত হবে নতুন একটি বিভাগ। এ বিভাগেও আলাদা একজন সচিব থাকবেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কেও দুই ভাগে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ভাগকে একটি বিভাগ করা হচ্ছে। শুধু বিমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো পরিচালনায় থাকবে একটি বিভাগ। এর দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। এ ছাড়া পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি বিভাগ করা হবে। এরও আলাদা একজন সচিব থাকবেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ আবারও ভাগ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের পরিধি বাড়ায় শুধু একটি বিভাগ দিয়ে কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা ও তদারকির জন্য একটি বিভাগ করা হবে। আর এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর পরিচালনায় থাকবে অন্য বিভাগ। এ বিভাগের আলাদা একজন সচিব থাকবেন। এর সাংগঠনিক কাঠামোও হবে আলাদা।

বর্তমানে ৪৫টি মন্ত্রণালয়ে ৭৫ জন সচিব রয়েছেন। এর মধ্যে আটটি মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন আলাদা আলাদা সচিব। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কাঠামোও আলাদা। এরই মধ্যে আরও পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

১৯৭২ সালে শিক্ষা, ধর্ম, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিবিষয়ক যে মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছিল, ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে সেখান থেকে স্বতন্ত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা পায়। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যাত্রা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাত্রা হয়। যুদ্ধকালে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি এত ব্যাপক ছিল না। ১৬ ডিসেম্বরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ঢাকায় সচিবালয় স্থানান্তর করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত এ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৮৬ সালে সরকারি আদেশ অনুসারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর আগেই দুটি ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, অন্যটি হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। দুই বিভাগের দু’জন সচিব রয়েছেন। এখন কাজের পরিধি বাড়ায় শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগকেই আবার দুই ভাগ করার চিন্তা রয়েছে।-সমকাল
২৫ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জেএম/আরএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে