বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:২২:০৭

কাউন্সিল ঘিরে বিএনপির ভেতরে উত্তাপ

কাউন্সিল ঘিরে বিএনপির ভেতরে উত্তাপ

মজুমদার ইমরান : কাউন্সিল ঘিরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভেতরে বিরাজ করছে উত্তাপ। জোরেশোরে চলছে পদ-পদবি পাওয়ার লবিং। মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ঘিরে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে মেরুকরণ। আসছে মার্চে বিএনপি তাদের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছে।

এখনো চূড়ান্তভাবে কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগেই কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চান। আগামী ২৮ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে বিএনপি চাইছে ২৫ মার্চের আগে যেকোনো দিন তাদের দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে।

শনিবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্চ মাসে বিএনপি কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তিনি কাউন্সিলের দিনক্ষণের কথা কিছুই উল্লেখ করেননি।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, একাধিকবার কাউন্সিলকে সামনে রেখে সরকার বিএনপির নেতাদের হয়রানি করেছে। এবারো সরকার একই কৌশল নিতে পারে। এমনটি বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি আওয়ামী লীগের আগেই কাউন্সিল করতে চাইছে। জানা গেছে, ১৯ অথবা ২০ মার্চ যেকোনো দিন বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। দু’একদিনের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দলের কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবেন।

জানা গেছে, সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে কয়েক দফায় সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আলোচনায় আসে। তাই বিএনপিও চাইছে তার আগেই দলের কাউন্সিল সম্পন্ন করে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামতে। ভোটের মাঠে লড়াই চালানোর পাশাপাশি কাউন্সিলের পর একটি নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে রাজপথেও বিএনপি আন্দোলন জোরদার করবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত না হলেও আমরা ১৯ মার্চ সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে তিনটি জায়গা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কাউন্সিলের জন্য বিএনপির প্রথম পছন্দ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর এ স্থানেই বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিকল্প হিসেবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনও বরাদ্দের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

বিএনপির সহদফতর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। আর কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্ব ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে করার কথা ভাবা হচ্ছে। সবকিছুই নির্ভর করছে স্থান বরাদ্দ পাওয়ার ওপর।

জানা গেছে, বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুসারে কাউন্সিলের পূর্বেই বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হবে। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে মহাসচিব পদে একজনকে নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলররা। পরবর্তী সময়ে স্থায়ী কমিটিসহ পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সারাদেশের বিএনপির সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর হিসেবে কাউন্সিলে অংশ নেবেন। এছাড়াও চেয়ারপার্সনের বিশেষ ক্ষমতাবলে ১০ শতাংশ কাউন্সিলরও কাউন্সিলে অংশ নেবেন।

নবম জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করে। ওই কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়। যে পদে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে নির্বাচিত করা হয়। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।

পরে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারো বিএনপির কাউন্সিলকে সামনে রেখে গঠনতন্ত্র সংশোধন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এক ব্যক্তির একাধিক পদে থাকাসহ গঠনতন্ত্রে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি হাইকমান্ড।

জানা গেছে, ইতিপূর্বে কাউন্সিলকে সামনে রেখে যেসব উপকমিটি গঠন করা হয়েছিল সেগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। নতুন করে কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনের জন্য। গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তা প্রস্তাবনা আকারে চেয়ারপার্সনের কাছে উপস্থাপন করবেন। চেয়ারপার্সন পরে তা কাউন্সিলের সামনে তুলে ধরবেন, যা পরবর্তী সময়ে কণ্ঠভোটে পাস করা হবে। এদিকে বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে ইতিমধ্যে পদপদবি পেতে দলের নেতারা তদবির, লবিং শুরু করেছেন।

মহাসচিব পদেও নতুন নতুন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হচ্ছেন এমন গুঞ্জন থাকলেও। মহাসচিব পদে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য তরিকুল ইসলামের নামও জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে।

এছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও মহাসচিব হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত সেপ্টেম্বরে লন্ডন সফরেই দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির পদপদবির বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন।

এখন সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করেই কাউন্সিল পরবর্তী সময়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি তিনি অনুমোদন দেবেন। জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হবে। সাংগঠনিক, দাফতরিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। স্থায়ী কমিটিতেও পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। নতুনভাবে স্থায়ী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমানের জায়গা হতে পারে।

একটি সূত্র জানায়, কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়েছেন। একজন অন্যজনের আড়ালে হাইকমান্ডের কান ভারি করার অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানান, সামনে বিএনপির অনেক কঠিন সময় পার করতে হবে। ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রামকে গুরুত্ব দিয়েই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।

জানা গেছে, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে স্থায়ী কমিটির পদ মর্যাদায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিচারপতি টিএইচ খান, ড. আরএ গনি, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ড. আসিফ নজরুল, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শামছুজ্জামান দুদু, ড. তুহিন মালিক।

এছাড়া থাকতে পারে, আহমেদ আজম খান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মুশফিকুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, মীর মো. নাসির, হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, সাবেক শিক্ষা সচিব খন্দকার শহীদুল আলম প্রমুখ।

ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদক পদে যারা আসতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, গোলাম আকবর খন্দকার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আহসান হাবিব দুলু, নাজিমউদ্দিন আলম, এহসানুল হক মিলন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবুল খায়ের ভূইয়া, অধ্যাপক এমএ মান্নান, এমরান সালেহ প্রিন্স, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, তাবিথ আউয়াল, নাদিম মোস্তফা, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনা, শিরিন সুলতানা, রেহানা আক্তার রানু, নীলুফার চৌধুরী মনি, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, শাম্মী আক্তার, ব্যারিস্টার রুহিন আফরিন আহাদ, শ্যামা ওবায়েদ, সাইফুল আলম নীরব, আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ। -মানবকণ্ঠ

২৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে