এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশের সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখে ব্রয়লার মুগির মাংস। গরু-খাসির মাংস যখন বিলাসী খাবারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে তখন সাধারণের মুখে মাংসের স্বাদ বলতে ব্রয়লার মুরগির মাংস।
কিন্তু সেটাও যেন এখন দূর স্বপ্ন, নাম উঠেছে বিলাসী খাবারের তালিকায়। কিন্তু কেন? বাজার মনিটরিং সংস্থা গুলো বলছে: সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির বাজার। সিন্ডিকেটের সদস্যরা যখন ইচ্ছে বাজারে কৃত্রিম সংঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে।
আবার লাভের আশার ক্ষুদ্র খামারিরা যখন মুরগির পালন করছে, বাজারজাতের ঠিক আগ মুহূর্তে ইচ্ছে করে দাম কমিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে। বড় উদ্যোক্তা হওয়ায় কম দামে মুরগি বাজারে ছাড়লেও তারা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না।
কারণ তাদের উৎপাদন খরচ কম। কিন্তু উৎপাদন খরচ প্রান্তিক পর্যায়ে বেশি হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নিরুৎসাহীত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পে। মূল ব্যবসাটা চলে যাচ্ছে বড় বড় করপোরেট কোম্পানি গুলোর কাছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রয়লার মুগির বাজারের কারসাজির মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। সপ্তাহ খানেক আগেও জায়ান্ট কোম্পানি গুলো তাদের ফার্ম গেট থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। সেই মুরগি হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। কোনভাবেই যখন বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিলো না তখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্পোরেট উৎপাদেনের সম্মতিতে ফার্মগেট থেকে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। এ ঘটনা গত ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবারের।
কিন্তু হঠাৎ-ই গত রবিবার রাতে দাম কমিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ১৬০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি শুরু করে ‘বিগ ফোর’ খ্যাত পোল্ট্রি খাতে চারটি বড় কর্পোরেট কোম্পানি। গতকাল মঙ্গলবার বাজারে যে মুরগিগুলো এসেছে সেগুলো ফার্ম গেট ব্যতীত ছাড়া পাইকারি বাজারে ছাড়া হয়েছে সোমবার রাতে। এই মুরগিগুলোর দাম ধরা হয়েছে ১৫৩ টাকা। বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা।
কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের খরচ পড়ে ১৬০ টাকা। বড় কোম্পানিগুলোর খরচ কম পড়ার কারণ তারা নিজেরাই বাচ্চা উৎপাদন করে, ফিড (খাবার) প্রস্তুত করে আবার পরিসর বৃহৎ হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে আসে।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র খামারিদের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মুরগির বাচ্চা-ফিড কিনতে হয়, পরিসরও ছোট। তাই খরচ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কর্পোরেট কোম্পনিগুলো যদি বাজারে ১৫৩-১৬০ টাকায় ফার্ম গেট থেকে ব্রয়লার পাইকারি বাজারে ছাড়ে তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ক্ষুদ্র খামারিরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন: চলতি মাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগি যখন ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু হয়, তখন (৫-৬ মার্চ) আমরা সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের তথ্যের ভিত্তিতে ৯ মার্চ আমরা পোল্ট্রি সেক্টরের সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের ডেকে পাঠাই।
সেখান থেকে জানতে পারি, বড় কোম্পানিগুলোর প্রতিকেজি মাংসের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। আর বড় ফার্মগুলোর কন্ট্রাক্টের বাইরের প্রান্তিক খামারিদের ১৬০ টাকা। সেই মিটিংয়ের পর আমরা সরকারে কাছে ৮ দফা সুপারিশ করি। পরদিন দেখি দাম আরও বেড়ে গেছে! ফার্ম গেট থেকে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বড় চার কোম্পানিকে শোকজ করা হয়। পরে বড় কোম্পানিগুলো ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা ব্রয়লার মুরগি বিক্রির ঘোষণা দেয়। কিন্তু রবিবার রাত থেকে দাম কমিয়ে ১৫৩ টাকায় বিক্রি শুরু করে তারা।
এ পরিস্থিতিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিভাবে দেখছে জানতে চাইলে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানান: বড় কোম্পানি গুলোগত রাতে ১৫৩ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি করেছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি, বাজারকে কারা ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে, কারসাজি কারা করছে, কেজিতে ৭০-৮০ টাকা নিয়ে গেলো কারা-এগুলো খুঁজে বের করতে। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা সরকারের কাছে আমাদের সুপারিশ গুলো তুলে ধরবো।