শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৩৬:২৮

সরকারেই থাকছে জাতীয় পার্টি

সরকারেই থাকছে জাতীয় পার্টি

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের সঙ্গেই থাকার কথা জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা রওশন এরশাদের কাছে জানতে চান তার দল সরকারে থাকছে কিনা?

জবাবে রওশন শুধু ‘না’ বলেন। সন্ধ্যা ৫টা ৩৫ মিনিটে বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যান। প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ফখরুল ইমাম।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশনের বৈঠকের সময় সংসদ সচিবালয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ। বৈঠক শেষে রওশন এরশাদ তার কার্যালয়ে ফিরে দলের কয়েক এমপি ও তার সঙ্গে যাওয়া ওই তিন নেতাসহ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। একই সময় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন এইচএম এরশাদ, সদ্য নিয়োগ পাওয়া দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ আরও কয়েক এমপি।

এ সময় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির কোনো এমপিকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। বৈঠক প্রসঙ্গে রওশন এরশাদ বলেন, ময়মনসিংহের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিনি উন্নয়নমূলক সব কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

মন্ত্রিসভা ও দলের সংকট নিয়ে কোনো আলাচনা হয়েছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন না, এসব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। জাতীয় পার্টিতে কোনো সংকট নেই বলেও জানান তিনি। বলেন, এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন যাবো।

একই বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বৈঠকের জন্য সময় আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সেকারণে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছে। তবে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনও জানি না। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

একই বিষয়ে দলের মহাসিচব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা জেনেছি দুই জনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কি আলোচনা হয়েছে তা জানি না। এদিকে দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ওই বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা সম্প্রতি দলের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মনোভাব ও তার ভূমিকার ব্যাখ্যা করেন। এদিকে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, শিগগিরই হয়তো দলের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এখনও দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি।

মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী: জাতীয় পার্টি থেকে সরকারে যোগ দেয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না। পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পদত্যাগের নির্দেশনা এরই মধ্যে কয়েক দফা প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। আগামীতে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হবে না।

জাতীয় পার্টির একাধিক সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগ করাতে বর্তমানে এক মেরুতে অবস্থান করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, বেগম রওশন এরশাদ ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। শুধু এ বিষয়টি ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তাদের মধ্যে আপাতত ঐকমত্য নেই।

জাতীয় পার্টির একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে কো- চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদের ও নতুন মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়োগ দেয়ার পরই দলে দৃহদাহ শুরু হয়। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে ঘোষণা করেন। এ নিয়ে নতুন করে দুই গ্রুপের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। সরকারের সঙ্গে যোগ দেয়া তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা ও এইচএম এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদের দলে যোগ দেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে তিন সদস্যকে অনুরোধ করেন।

তাদেরকে রওশন এরশাদ বলেন, আমরা সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাই। আপনারা সহায়তা করেন। আপনারা মন্ত্রী থাকলে জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এ কারণে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এ সময় সরকারে যোগ দেয়া মন্ত্রীরা বলেন, মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেই কি সত্যিকারের বিরোধী দল হয়ে গেল। আমরা পদত্যাগ করার পরও মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা থাকবেন। তখন কি বলবেন? এছাড়া আপনিও সংসদের ভেতরে বা বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দিচ্ছেন না। এটা কি জাতীয় পার্টির জন্য সুখবর।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলের নেতা বলেন, আপনারা পদত্যাগ করলে পার্টির চেয়ারম্যানকে বিষয়টি বুঝানো যাবে। প্রয়োজন পড়লে বিষয়টি ওয়ার্কিং কমিটিতে আবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে পার্টির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান বা বিরোধীদলীয় নেতা কারও কথা শুনবেন না তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেলেই তারা পদত্যাগ করতে পারেন। -মানবজমিন
২৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে