শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৪:০৮:২৬

জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে সরকার

জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠার পর অবশেষে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দর বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের বাজারদর।

দাম না কমানোয় সরকারের মুনাফা ও সম্ভাব্য নতুন মূল্যের একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করবে সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর কমেছে। বাংলাদেশে দর না কমানোর কারণে এ পর্যন্ত ১০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ও দেশের ভেতরের অবস্থার পর্যালোচনামূলক তথ্যসহ জ্বালানি তেলের দর কমানোর একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ীই জ্বালানি তেলের নতুন দর নির্ধারণ করা হবে।’

প্রস্তাবে অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কতটা কমানোর কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নসরুল হামিদ তা জানাতে  অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে গত অর্থবছর জ্বালানি তেলে পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এ খাত থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিপিসি মুনাফা করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকালে জ্বালানি তেলের দর সমন্বয়ের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য নিয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দোজা অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদের কাছে যান।

ওই সময় বিপিসির চেয়ারম্যান তার কাছে জানতে চান, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে কি না? থাকলে কী পরিমাণ কমাতে চায় সরকার, তা জানানোর অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী বিপিসি প্রয়োজনে নতুন করে প্রস্তাব দেবে।

সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা করে এ সম্পর্কে জানানো হবে বলে বিপিসির চেয়ারম্যানকে জানান মাহবুব হোসেন।

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১২২ ডলার হয়। তখন বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর কমছে।

এখন ব্যারেলপ্রতি দর ৩০ ডলারেরও নিচে। আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি তেলের দর ২০ ডলারে নেমে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে না, পাচ্ছে শুধু সরকার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি দেশের ভেতরে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করে গতকাল বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ০.৩ শতাংশ বাড়বে। আর তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে ০.৪ শতাংশ। ভোক্তা চাহিদা বাড়বে ০.৬ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি কমবে ০.২ শতাংশ। তবে সরকারের সঞ্চয় কমবে ০.৪ শতাংশ। তেলের দাম কমানো হলে ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বেশি উপকৃত হবে উল্লেখ করে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এতে দেশের বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

সিপিডি বলছে, ক্রমাগত লোকসানের কারণে বিপিসির পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার ফলে গত অর্থবছরে বিপিসি পাঁচ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ বছর তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলে আরো ১১ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে তারা।

গত বুধবার দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর নামতে নামতে ৩০ ডলারে এসেছে। এখনই দেশের ভেতরে তেলের দাম সমন্বয় করার সময়। সরকার যেহেতু ব্যবসা করে না, সেহেতু দ্রুত দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করি।

সংগঠনটি বলেছে, ‘বর্তমান অবস্থায় দেশে বিনিয়োগ হবে না। কারণ বিনিয়োগের প্রধান সমস্যা জ্বালানি। নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার জ্বালানি তেলের দামও আকাশচুম্বী। তাই এখনই তেলের দাম কমানো দরকার।’

জ্বালানি তেলের দর কমাতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল। ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ। ফলে আমানতের সুদহার এর চেয়ে বেশি রাখতে হচ্ছে। তার সঙ্গে ৪ থেকে ৫ শতাংশ স্প্রেড নির্ধারণ করলে ঋণের সুদহার বেড়ে ১২-১৩ শতাংশে পৌঁছে যাচ্ছে, যা অনেক বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুক্তি হলো, সরকার এখন জ্বালানি তেলের দাম কমালে মূল্যস্ফীতির হার কমে যাবে। তখন আমানতের সুদের হারও কমবে। ফলে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে না নামলেও তা বেশ কমবে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দেবে।

৩ জানুয়ারি এক বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য চাপ দেন। তখন অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। এরপরই অর্থমন্ত্রী জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর কাছে তেলের দাম কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চিঠি পাঠান। চিঠিতে বিপিসির অবশিষ্ট দেনার দায় অর্থ মন্ত্রণালয় বহন করবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। -কালেরকণ্ঠ
২৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে