চাঁদপুর : স্কুল-কলেজের সামনে কিংবা রাস্তায় ইভটিজিং নিত্য ঘটনা। মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে মা-বাবা টেনশনে থাকেন। মেয়ের সঙ্গে অনেক মাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা যায়। স্কুল-কলেজ ছুটি না হওয়া পর্যন্ত মা মেয়ের জন্য অপেক্ষা করেন।
যারা মেয়ের সাথে যেতে পারেন না তারা থাকেন মহাটেনশনে। ছেলেদের ইভটিজিংয়ে পড়তে হয় অনেক মেয়েকে। ছেলেদের বখাটেপনা সইতে না পেরে অনেক মেয়ের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। গেল বছর চাঁদপুরের এক মেয়ের সুইসাইড নোটে কেঁদেছে তার পরিবার ও দেশ।
‘মা, ভাইয়া, আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোমরা নিও- মেয়ের সুইসাইড নোটে এমন করুণ লেখার কথা মনে হলে আজো অঝোরে কাঁদেন মা। মেয়ের মৃত্যুশোক সহ্য করতে পারছেন তিনি।
চাঁদপুরের স্কুলছাত্রী শারমিনের সুইসাইড নোটে লেখা ছিল-
‘মা, ভাইয়া, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষরা আমাকে বাঁচতে দিল না। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তারেক, তারেকের মা ও তার বোন কণিকা। আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোমরা নিও।’
সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের আয়নাতলী ফরিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন আক্তার মিনু।
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শারমিনকে চড় মারে ও মুখে থুতু দেয় তারই সহপাঠী তারেক হোসেন। তার মা রুপবান বেগম ও তার বোন কণিকাও শারমিনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন।
লাঞ্ছনা আর নির্যাতন সইতে না পেরে শারমিন ওইদিন দুপুরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।
শারমিনের আত্মহত্যার খবর পেয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা স্কুলে ভাঙচুর চালায়। এ সময় শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশকে ডেকে অভিযুক্ত তারেককে সোপর্দ করা হয়।
শারমিন শাহরাস্তি উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের পন্ডিত বাড়ির প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তাকে উত্ত্যক্ত করতো সহপাঠী সংহাই গ্রামের প্রবাসী আবু তাহেরের ছেলে তারেক।
ওইদিন সকালে তারেকের মা রুপবান বেগম ও বোন কণিকা স্কুলে প্রবেশ করে মিনুকে অপদস্থ করে। একপর্যায়ে তারেক তার মা বোনের সামনে মিনুর গায়ে হাত দেয় এবং তাকে চড় মারে।
দুপুরে মধ্যহ্ন বিরতিতে শারমিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এরপর তাদের ঘরের ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে তাকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আবদুল মতিন শারমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় শারমিনের বড় ভাই শাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় ঘটনার দিন রাতে একটি হত্য মামলা করেন। মামলায় তারেক ও তার মাকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তারেক শারমিনকে চড় মারে ও মুখে থুতু দেয়। এ লাঞ্ছনা সইতে না পেরে শারমিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০ আগস্ট সকালে তারেকের মা স্কুলে গেলে শিক্ষকরা শারমিন ও তারেককে নিয়ে আলোচনায় বসেন। পরে তার বোন দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে আসে। একফাঁকে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
শাহরাস্তি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিলদার আজাদ জানিয়েছিলেন, তারেককে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শারমিনকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবার বিকাল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, ওই বিদ্যালয়ে এর আগে ইতিপূর্বে ইভটিজিংয়ের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রী অপহরণ ও ইভটিজিংয়ের কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হোসেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বখাটেদের ২ বছরের শাস্তি দেন। এরপরও বিদ্যালয়ে ইভটিজিংয়ের ঘটনা বন্ধ না হওয়ায় জনগণ ক্ষোভ জানিয়েছে।
২৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম