শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:০৬:৩০

সব ফোকাস ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর দিকে

সব ফোকাস ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর দিকে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাহসিনা রুশদী লুনা। ইলিয়াস আলী অনুপস্থিত। এ কারণে আসন্ন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিলে সব ফোকাস লুনার দিকে। সমঝোতা কিংবা ভোট সবখানেই লুনার আধিপত্য বেশি।

এ কারণে সিলেট বিএনপির পদবিধারী অর্ধডজন নেতা ইতিমধ্যে তাহসিনা রুশদী লুনার আশীর্বাদ নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এটি যেন রীতিমত যুদ্ধ। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারের দ্বারে-দ্বারে। করছেন ভোট প্রার্থনা। আর এই ভোটেই সিলেট বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। গ্রুপিং লবিং চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

এই অবস্থায় তাহসিনা রুশদী লুনাই হয়ে উঠেছেন বড় ফ্যাক্টর। লুনা যেদিকে ইঙ্গিত দেবেন সেদিকেই পরবে জয়ের মালা। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিল হবে ভোটের মাধ্যমেই- এটা প্রায় নিশ্চিত। ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ২রা ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন সংগ্রহ আর ৩রা ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে। এই অবস্থায় ইতিমধ্যে জেলা ও মহানগর বিএনপির পদবিধারী অর্ধডজন নেতা ঢাকায় গিয়ে তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গে দেখা করেছেন। চেয়েছেন সমর্থন।

এর মধ্যে অনেকেই ইলিয়াস বলয়ের নেতা, আবার কেউ কেউ ইলিয়াস আলী বলয়ের বাইরেও। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা এবার সিলেট বিএনপির কমিটিতে নিজ থেকেই আসছেন না। ইলিয়াস বলয়ের নেতারা সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে তাকেই চেয়েছিলেন। কিন্তু লুনা তাতে মত দেননি। এ কারণে সব অংশের নেতারা লুনার কাছে ছুটে গেছেন। ইতিমধ্যে ঢাকায় গিয়ে লুনার সঙ্গে দেখা করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতির পদ প্রত্যাশী নেতা দিলদার হোসেন সেলিম।

ইলিয়াস আলীর একান্ত সহচর হিসেবে দিলদার সেলিম সিলেটে ছিলেন পরিচিত। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলেন দিলদার সেলিম। নিজ বলয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি নীরব ছিলেন। তবে, কোনো বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হননি। তিনি লুনার কাছে গিয়ে তার দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করে এসেছেন। সভাপতির পদপ্রত্যাশী আবুল কাহের শামীমও দেখা করেছেন তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গে। তার দেখা করার বিষয়টি ইতিমধ্যে সিলেটে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। আবুল কাহের শামীম পদত্যাগকারী নেতা সমশের মবিন চৌধুরী বলয়ের নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

এ ছাড়া, ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাচনে সরাসরি বিরোধিতা করে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শামীমও শেষ পর্যন্ত লুনার সমর্থন প্রত্যাশা করে দেখা করেছেন। এদিকে, ইলিয়াস বলয়ের শীর্ষ নেতা হিসেবে অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের দিকে আশীর্বাদ রয়েছে লুনার। ইলিয়াস নিখোঁজের পর থেকে লুনার সঙ্গে বিএনপির জামান বলয়ের সম্পর্ক  কমেনি বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। ফলে অ্যাডভোকেট জামানের প্রতি লুনার সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করেছেন তার বলয়ের নেতারা। ইতিমধ্যে কাউন্সিল নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশী জামানের বেশ কয়েকবার টেলিফোনে কথা হয়েছে।

আরেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদও ছিলেন ইলিয়াস আলী বলয়ের সিনিয়র নেতা। কিন্তু ইলিয়াস নিখোঁজের পর তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। তবে, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আলী আহমদ যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও ইতিমধ্যে তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। চেয়েছেন তার সমর্থনও। এদিকে, মহানগর সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশী কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ ছাড়া জেলা ও মহানগরে সাংগঠনিক সম্পাদক পদবিধারী অনেক নেতাই লুনার সঙ্গে দেখা করেছেন।

জেলায় জামান ও মহানগরে ফরহাদ সম্পাদক প্রার্থী: সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলনকে সামনে রেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জরুরি সভা বৃহস্পতিবার কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়।

পাশাপাশি দলের স্বার্থে বিএনপির পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী নেতা অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে  এবং কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ শেখ মকন মিয়া চেয়ারম্যান, সাবেক সহ-সভাপতি মোজাহিদ আলী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সারোওয়ার আহমদ, মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও আসন্ন সম্মেলনে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ফখরুল ইসলাম ফারুক, মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াছেহ চৌধুরী জুবের, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন লস্কর, মহানগর বিএনপি নেতা আবদুল আলীম দিপক, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি লুৎফুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ময়নুল হক, মহানগর তাঁতীদলের সাধারণ সম্পাদক হাজী শওকত আলী প্রমুখ।

মাহবুব চৌধুরীর ইশতেহার ঘোষণা : সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মাহবুব চৌধুরী মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে নিজস্ব ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে বিএনপির মূলধারার রাজনীতিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং আত্মনির্ভশীলতার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের যে প্রচেষ্টা তা উৎসাহিত করা, নতুন ধারার রাজনীতি, সংগঠনের মর্যাদা, শৃঙ্খলা ও শক্তিবৃদ্ধির প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।

নতুন আঙ্গিকে মহানগর যুবদলকে ঢেলে সাজানো, দ্রুতম সময়ে ছাত্রদলের সকল অনৈক্য দূর করে ঐক্যবদ্ধ ও আরও গতিশীল করতে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ, অন্যান্য অঙ্গসংগঠনে আরও গতিশীলতা আনা, ওয়ার্ড বিএনপিতে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কৌশল প্রণয়ন, মেট্রোপলিটন থানা বিএনপি গঠনের উদ্যোগ, কাউন্সিলের ২ সপ্তাহের মধ্যে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে জোরদার পদক্ষেপ নেয়া হবে।   -মানবজমিন

৩০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে