এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশজুড়ে চলা মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ গতকাল বুধবার বেশ কিছু এলাকা থেকে কমে এসেছে। আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে বৃষ্টিপাত। এর মধ্যেও ছয় জেলায় বইছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। ৩৭ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছিল।
১১ বছরের মধ্যে জুন মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়েছে গতকাল। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ দেশের সব বিভাগেই কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এ সময় দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
এদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দর এলাকাগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে বইছিল মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছিল। আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ তাপপ্রবাহের বিশেষ সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ৯-১০ জুন পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর জুনে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, যা গত ১১ বছরের মধ্যেও জুন মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জুনে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিনের তুলনায় গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে কমেনি মানুষের গরমের অনুভূতি। মূলত জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে তীব্র ভাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আজ (গতকাল) তাপপ্রবাহের এলাকার সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও তাপপ্রবাহ ছিল না। ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকায় আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কমে এসেছে।’
তবে গতকাল রাজশাহীতে রেকর্ড তাপমাত্রা উঠলেও সামগ্রিকভাবে পুরো দেশের তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল বলে জানান ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে আজ (গতকাল) দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এখন থেকে দেশের কিছু কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বৃষ্টিপাত হবে। আগামীকাল (আজ) ঢাকায়ও বৃষ্টি হতে পারে।’
এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখনো টেকনাফে প্রবেশ করেনি। এটি আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরের পাঁচ দিনে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব শুরু হওয়ার আগেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ১১-১২ জুনের দিকে দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ১০ তারিখের পর সারা দেশে বৃষ্টিপাত কমবেশি বাড়বে, কিন্তু সারা দেশে একই সঙ্গে বাড়বে না।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি স্টেশনের ১২টিতে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রাঙামাটিতে ৯৮ মিলিমিটার। এ ছাড়া বান্দরবানে ২৫ মিলিমিটার এবং নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।