শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬, ১১:০৪:২২

মধু চাষে বদলে যাচ্ছে জীবন

মধু চাষে বদলে যাচ্ছে জীবন

নিউজ ডেস্ক : ক্ষেতে ক্ষেতে হলুদের সমারোহ। নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারের বিস্তীর্ণ মাঠ যেন হলুদ ফুলের চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। গুন গুন করে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছুটে চলেছে মৌমাছি।

সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় সরিষা ফুল আর মৌমাছির মাখামাখি। ফুল থেকে মধু আহরণের জন্য তাদের নিরন্তর ছুটে চলা। মধু সংগ্রহ করে তারা রাখছে ক্ষেতের ধারে রাখা বাঙ্গুলোতে।এ মধু বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। বিভিন্ন দেশে এটা রফতানিও করা হচ্ছে।এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

মধু চাষি কালাম মিয়া জানান, এ বছর তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। বাড়তি আয়ের জন্য তিনি জমির পাশেই ১০০টি মৌমাছির বাঙ্গুলো স্থাপন করেছেন। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনি ৪০০ কেজি মধু পাচ্ছেন। প্রতি কেজি মধু তিনি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।বাঙ্গুলো থেকে সপ্তাহ শেষে তিনি নিজেই মধু আহরণ করেন। এতে তার খরচও কম হয়। তার দেখাদেখি অনেকেই মধু আহরণ করছেন।

আরেক মৌচাষি শওকত আলী বলেন, তিনি সরিষা ক্ষেতে ৩০০টি বাঙ্গুলো স্থাপন করেছেন। সরিষা ফুল থেকে ছয় মাস মধু আহরণ করা হয়ে থাকে। অন্য ছয় মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছি পালন করা হয়। প্রতি কেজি মধু তিনি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি জানান, কাঠের তৈরি একটি বাঙ্গুলো বানাতে খরচ হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মতো। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে তার কাছ থেকে মধু কিনে নিয়ে যান।

বাঙ্গুলো দেখাশোনা করছেন এক যুবক। তাকে মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়।

মৌচাষিরা জানান, রানী মৌমাছি সপ্তাহে লক্ষাধিক ডিম দেয়। এসব ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরপর এগুলো অনবরত মধু আহরণের জন্য ফুলে ফুলে ছুটে বেড়ায়। মধু আহরণ করে এরা বাঙ্গুলো সঞ্চয় করে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মধু সঞ্চয় বেশি হয়। সূর্যের তাপ যত বেশি মধুর আহরণও তত বেশি হয়ে থাকে। আড়াইহাজার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চলতি বছর সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এ মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের জন্য মৌসুমি মৌচাষিরা বাঙ্গুলো স্থাপন করে থাকেন।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ক্ষেতে এ বছর প্রায় দুই হাজার বাঙ্গুলো স্থাপন করা হয়েছে। একটি বাঙ্ থেকে প্রতি সপ্তাহে চার কেজি মধু পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ পদ্ধতিতে দিন দিন বাড়ছে মধু আহরণ। স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। খাঁটি মধু কেনার জন্য অনেকে ছুটে যাচ্ছেন চাষিদের কাছে। গাজীপুরে ওষুধ উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধু সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় পাইকাররা এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া বহির্বিশ্বেও দিন দিন বাড়ছে এর কদর। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারত, মিয়ানমার, অস্ট্রিলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মধু রফতানি করা হচ্ছে।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শীত মৌসুমে মধু সংগ্রহ করে অনেকেই সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদির বলেন, আড়াইহাজার উপজেলায় চলতি বছর ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষা ক্ষেত থেকে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছে মৌসুমি মৌচাষিরা। এতে তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাসহ বহির্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেও মধু রফতানি করা হচ্ছে।
৩০ জানুয়ারি ২০১৬ এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে