রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬, ১১:০২:৫৩

একজন মায়ের বিদায়, শিশু মেঘলার আহাজারি!

একজন মায়ের বিদায়, শিশু মেঘলার আহাজারি!

নিউজ ডেস্ক : লাল রঙের কাপড় দিয়ে খুঁটিতে বাঁধা কোলের শিশু। তার বুকে সাঁটানো কাগজে লেখা বাবার মোবাইল ফোন নম্বর। সামনে কিছু মুড়ি আর একটি বোতলে সামান্য পানি। একটু দূরে রেললাইনে পড়ে আছে শিশুটি মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহ।শিশুটি আহাজারি করছে।

শনিবার সকালে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাঞ্চন রেল জংশনের সামান্য দূরে বাসিয়াপাড়া এলাকায় এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিন শিশুর মা পারুল বেগম (২৭)।ঘটনাটি সর্বমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্ট করেছে।

পারুলের স্বামীর নাম রফিকুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার কলেজপাড়ায়। মেঘলা ছাড়াও এ দম্পতির আরো দুটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে রাসেল বোচাগঞ্জে কারিতাস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারপর আরেক মেয়ে ইতি, সব শেষে মেঘলার জন্ম।

পারুলের বাবার বাড়ি বোচাগঞ্জের ছাতইল ইউনিয়নের যশোরপাড়ায়। স্বজনদের দাবি, মেঘলার জন্মের পর থেকেই পারুল মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাবার বাড়িতেই ছিলেন। ওই বাড়ি থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৮-৯ কিলোমিটার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে কাঞ্চন রেল জংশন থেকে সামান্য দূরে বাসিয়াপাড়া এলাকায় ঠাকুরগাঁওমুখী কাঞ্চন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন পারুল। আশপাশের লোকজন দ্রুত কাছে এসে দেখেন, মেঘলাকে লাল রঙের কাপড় দিয়ে রেললাইনের পাশের একটি সীমানা পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর প্রথমে অদূরে মাঠে কর্মরত কয়েকজন কৃষক ছুটে এসে পারুলের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখতে পান। শিশুটিকেও উদ্ধার করেন তারা। খবর পেয়ে ছুটে আসে আশপাশের মানুষ। পরম মমতায় মেঘলাকে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন তারা।

রেলওয়ে থানার এসআই জিয়াউল হক জানান, দিনাজপুরের রেলওয়ে মাস্টারের মাধ্যমে খবর পেয়ে প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে পারুলের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেন তারা। মেঘলার বুকে কাগজে লেখা মোবাইল নম্বরে ফোন করে তার পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। বোচাগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম লিটনকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন পারুলের স্বামী রফিকুল ইসলাম। পারুলের বোন সুফিয়াও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা লাশ শনাক্ত করেন। উভয় পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের হাতে লাশ তুলে দেওয়া হয়। আর মেঘলাকে দেওয়া হয়েছে তার বাবার হেফাজতে। স্বজনরা জানিয়েছে, পারুলের লাশ দাফন হবে স্বামীর বাড়িতে।

সুফিয়ার বরাত দিয়ে উপপরিদর্শক জিয়াউল হক জানান, মেঘলার জন্মের পর থেকেই পারুল মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন।

পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে বোচাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, মেঘলা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পারুল মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। অসুস্থতার কারণে মাস দুয়েক ধরে বাবার বাড়িতে ছিলেন তিনি। তবে রোগের চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
৩১ জানুয়ারি ২০১৬ এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে