এমটিনিউজ ডেস্ক: পাহাড়ি এলাকা থেকে উপকূলীয় জনপদ। একযোগে এমন প্রবল বর্ষণ খুব কমই দেখা গেছে। উপকূলীয় জনপদ খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, এবং পাহাড়ি জনপদ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবানের সর্বত্র ভারী বর্ষণ। এত বৃষ্টি! এ যেন মানুষের চিন্তারও বাইরে। সর্বশেষ বর্ষার এমন রূপ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৫ সালে। এর আগে এত বৃষ্টি হয়নি। এ যেন ৩৮ বছরে বৃষ্টির রেকর্ড।
চারদিকে থৈ থৈ পানি। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহর। বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বিদ্যুৎ। নেই ইন্টারনেট সংযোগ। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ যেন ভূতরে শহর। এমন পরিস্থিতি এখন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ফুলেফেঁপে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বান্দরবান।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে ‘কার্যত বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে বান্দরবান। কোথাও কোথাও পাহাড় ধসে জেলা থেকে উপজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। শহরের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র, হোটেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।
সোমবার (৭ আগস্ট) রাতে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার গণমাধ্যমকে বলেন, রোববার (৬ আগস্ট) থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার থেকে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এরই মধ্যে লামায় ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। নীচু এলাকায় পানির স্রোতের কারণে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা কষ্টকর হচ্ছে।
শহরের নীচু এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহর থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির পথে কোনো যানবাহন চলছে না। এ ছাড়া রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির পথেও যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ধসে কক্সবাজারের উখিয়া এবং চকরিয়ায় রোহিঙ্গা মা-মেয়েসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উখিয়া ও চকরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কমপক্ষে ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছে মানুষ।
এদিকে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর ফের রোববার এমন প্রবল বৃষ্টি হলো চট্টগ্রামে। রোববার চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সোমবার বান্দরবানের বৃষ্টি চট্টগ্রামকেও ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ওই পার্বত্য জেলায় ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে।
বরিশাল ও খুলনায় একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে সোমবার রাজধানীতে সকাল থেকে ঝিরিঝিরি ঝরছে। সারা দিনে ঢাকায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুই-তিন দিন বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। এরপর শনিবার থেকে ফের প্রবল ধারায় বৃষ্টি হবে বলে জানয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গত মে, জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে রীতিমতো খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। জুলাইতে মৌসুমি বায়ু আসার পরেও বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি। বরং জুলাইয়ে অর্ধেক সময় দেশের কোথাও না কোথাও তাপপ্রবাহ ছিল। ফলে সাগর ও নদীর পানি উত্তপ্ত হয়ে মেঘ বেড়ে যায়। ফলে গত রোববার থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া বইতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেরাগুলোতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে ১৯৮৩ সালের ৪ আগস্ট। ওই দিন ৫১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই বছর ৫ জুলাই চট্টগ্রামে ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়। এরপর ১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই ৩৭৪ মিলিমিটার ও ১৯৮৮ সালের ৮ জুলাই ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। চলতি বছর রোববার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার এবং সোমবার (৭ আগস্ট) বান্দরবানে ৩৮ বছরের সর্বোচ্চ ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।