এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বলেশ্বর নদের ইলিশ। যেমন তার রূপ, তেমন তার স্বাদ-গন্ধ। উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলার একটি ঐতিহ্যও বলা চলে এই বলেশ্বরের ইলিশকে। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী, সাগরের মধ্যে বলেশ্বর নদের ইলিশই সেরা।
ইলিশের আসল স্বাদ-গন্ধ পেতে চাইলে জুড়ি নেই বলেশ্বরের ইলিশের। এই রূপালি ইলিশের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে ভোজন রসিকদের। পদ্মার ইলিশের মতোই বলেশ্বর নদের ইলিশেরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও নামডাক।
স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ শরণখোলায় ছুটে আসেন এই বলেশ্বরের ইলিশের টানে। কিনে নেন কোনোরকম বরফের স্পর্শ ছাড়া তাজা ইলিশ। আবার অনেকে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও কিনে পাঠান সুস্বাদু এই ইলিশ। বলেশ্বরের ইলিশের নাম শুনলেই দামের দিকে তাকান না ইলিশপ্রেমীরা। বলেশ্বর নদে এখন প্রতিদিনই জেলের জালে ধরা পড়ছে মণকে মণ তরতাজা ইলিশ।
দুপুরের পর থেকেই জেলেরা ভেজা কাপড়ে ইলিশ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে ফেরেন আড়ৎগুলোতে। আর বিকেল হলেই আড়ৎ থেকে সেই ইলিশগুলো চলে যায় উপজেলা শহর রায়েন্দা বাজার, পাঁচরাস্তা প্রশাসন মার্কেট মাছ বাজারসহ বিভিন্ন হাটে-বাজারে। এসব ইলিশ আকার ভেদে দাম হাকিয়ে বিক্রি করে থাকেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন-চারদিন ধরে প্রচুর বড় ইলিশ ধরা পড়ছে বলেশ্বরে। রূপালি ইলিশের ঝিলিকে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখেও। ৮-৯শ’ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ অহরহ উঠছে জেলের জালে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মা’ ইলিশ। তবে, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এর দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। যে কারণে বড় ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ।
বলেশ্বর নদে জেলের জালে হঠাৎ ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য বিভাগ জানায়, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসছে ইলিশের ঝাঁক। তাছাড়া, কিছুদিন বাদেই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসম শুরু হবে। এজন্য মা ইলিশগুলো সাগর থেকে ঝাঁক বেধে মিঠা পানির শাখা নদ-নদীতে চলে আসছে। যা ধরা পড়ছে জেলের জালে।
সোমবার সন্ধ্যা ও মঙ্গলবার সকালে উপজেলা শহরের রায়েন্দা ও পাঁচরাস্তা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ব্যবসায়ীরা রূপালি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একেক জনের ডালায় ১০-১২ কেজি করে বড় সাইজের ইলিশ। প্রত্যেকটি ইলিশের পেটেই ডিম বোঝাই। ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দাম যাচাই-বাছাই করে বনিবনা হলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পছন্দসই ইলিশ।
রায়েন্দা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সোহাগ হাওলাদার, খোকন হাওলাদার, আউয়াল ফরাজী, রাসেল হাওলাদার জানান, গত তিন-চারদিন ধরে বলেশ্বরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সাইজও বেশ বড়। এর আগে ছোট ইলিশ (জাটকা) ধরা পড়তো। তাও পরিমানে কম। বর্তমানে ৮-৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার থেকে ১হাজার ২০০টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০টাকা এবং দুই কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এসব ব্যবসায়ীরা জানান, দাম যতোই হোক না কেন কোনো ইলিশই অবিক্রিত থাকে না। স্থানীয়দের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও ইলিশ কিনে নেন তারা। ককসিট ভরে বলেশ্বরের ইলিশ পাঠান দূর-দূরান্তের স্বজনদের কাছে।
বলেশ্বর নদের জেলে সোহেল শাহ, রাসেল হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, কয়েকদিন আগেও সারাদিন জাল ফেলে দেড়-দুই কেজি জাটকা উঠতো। এখন বড় ইলিশ উঠছে। প্রতিদিন একেকজন জেলে ৮-১০ কেজি করে বড় ইলিশ পাচ্ছেন। এসব ইলিশ তাদের নির্ধারিত আড়তে বিক্রি করেন। এখন জেলে-মহাজন-ব্যবসায়ী সবাই লাভে আছেন।
সোমবার (৪ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় রায়েন্দা মাছ বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন শাহ আলম নামে এক কাতার প্রবাসী। তিনি দেড় কেজি ওজনের দুটি ইলিশ কিনেছেন। ১৬শ’ টাকা কেজি দরে দুটি ইলিশের দাম পড়েছে চার হাজার ৮০০ টাকা। ওই ক্রেতার কাছে জানতে চাইলে বলেন, দাম কোনো বিষয় না। বলেশ্বরের ইলিশ আমার খুব পছন্দ। তাই কিনে নিলাম।
শরণখোলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীর চেয়ে বলেশ্বর নদের ইলিশের স্বাদ-গন্ধ একটু আলাদা। ইলিশের চেহারা-আকারও ভিন্ন। বেঙ্গাপসাগরের ইলিশের তুলনায় পেটি খুব চওড়া। প্রচুর তেলও এই ইলিশে। যে কারণে দাম ও চাহিদা বেশি।
মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় আরো বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ইলিশের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারণে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শাখা নদ-নদীতে উঠে আসছে। তাই জাল ফেললেই ধরা পড়ছে বড় ইলিশ।
তাছাড়া, অক্টোবর মাসে শুরু হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময় ২২ দিন দেশের সকল নদ-নদী ও সাগরে ইলিশসহ সকল প্রকার মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে। প্রজনন মৌসুম আসন্ন হওয়ায় এখন সব ইলিশের পেটে ডিম থাকাটাই স্বাভাবিক।