বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩, ০৮:৫২:০২

যে কারণে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে হত্যা করেন ভাগনি জামাই!

যে কারণে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে হত্যা করেন ভাগনি জামাই!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গলা কেটে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। নিহত জেকি আক্তারের ভাগনি জামাই জহিরুল ইসলাম পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। 

বুধবার (১৮ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বাঞ্ছারামপুর) আদালতের বিচারক সাগত সৌম্যের কাছে হত্যার বিবরণ দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জহিরুল।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) সোনাহর আলী শরিফ। 

এ সময় বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন, বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম, বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজাদ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।    

জহিরুলের জাবনবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম জানান, নিহত জেকি আক্তারের বড় বোন শিল্পী বেগমের মেয়ে আনিকার সঙ্গে বিয়ে হয় আসামি জহিরুলের। তবে বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এতে অনামিকা প্রায়ই তার নিজ বাড়িতে চলে যেতেন। কয়েক দিন আগেও শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন অনামিকা। অনামিকাকে ফিরিয়ে নিতে ও কলহ মীমাংসার জন্য গত মঙ্গলবার সকালে জহিরুল তার খালা শাশুড়ি জেকি আক্তারের বাড়িতে যান। কারণ জেকির কথা জহিরুলের শাশুড়ি ও স্ত্রী গুরুত্ব দেয়।

ওইদিন প্রথমে সকালে গিয়ে জেকির সঙ্গে কথা বলে নাস্তা করে চলে যান জহিরুল। পরে আবার রাত ৮টার দিকে জেকির বাড়িতে যান। তখন পারিবারিক কলহের বিষয়টি নিয়ে কথা বললে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। সেসময় ক্ষোভে ঘরে থাকা দা দিয়ে জেকি আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করেন জহিরুল। এ সময় মায়ের চিৎকারে বড় ছেলে মাহিন ছুটে আসলে তাকেও একটি কোপ দেয়। তখন সে প্রাণে বাঁচার জন্য দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে গেলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করেন। 

সেসময় অন্য ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল ৬ বছর বয়সী মহিন ও ৭ মাসের ওজিহা। তখন ঘুম থেকে উঠে পড়ে মহিন। দেখে ফেলে হত্যার ঘটনা। 

পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে ভয়ে পায়চারি করে মহিন। সে সময় দরজা খুলতে দেখে ভয়ে বাথরুমে গিয়ে লোকায় সে। সেখানে গিয়ে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করেন জহিরুল। তারপর আধাঘণ্টার মত সেই ঘরে পায়চারি করেন। পরে রাত ১টার দিকে পালিয়ে যান। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর সকাল থেকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের বিশেষ শাখা কাজ করেছে। 

এর আগে প্রাথমিক অবস্থায় তিনজনকে জবাবদিহিতার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে আলামত, সুনির্দিষ্ট সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে জানতে পারি জহিরুলের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি। 

পরে রাতেই নরসিংদীর মধাবদী থেকে তাকে আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনা হয়। তখন পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন জহিরুল। তবে এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বাঞ্ছারামপুরেররআইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর-ছয়ানি দক্ষিণপাড়ায় গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী শাহ আলমের বসতঘর থেকে তার স্ত্রী জেকি আক্তার (৩৫) ও দুই ছেলে মাহিন (১৪) এবং মহিনের (৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে