বুধবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৫৯:২৬

কুড়িয়ে পাওয়া দুইটা ডিম দিয়ে শুরু, বিশাল বনমোরগের খামার!

কুড়িয়ে পাওয়া দুইটা ডিম দিয়ে শুরু, বিশাল বনমোরগের খামার!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বনমোরগ বা বনমুরগি পাহাড় বা বনের বিলুপ্ত প্রজাতির খুবই চালাক পাখি। যা গৃহপালিত দেশীয় মোরগ-মুরগির আদি বংশধর হিসেবে গণ্য। এ প্রজাতির মোরগের শারীরিক মাপ ৬০-৭০ ও মুরগীর ৪০-৫০ সেন্টিমিটার। 

এদের গড় ওজন ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। দেখতে দেশীয় মোরগ-মুরগির চেয়ে সুন্দর ও আলাদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা অনেক।

প্রচলিত আছে, বনের মোরগ বা মুরগি পোষ মানানো যায় না। এ প্রচলিত ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে পোষ মানিয়ে গৃহে পালন করা হচ্ছে। এতে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের মেওয়া পাড়া এলাকার হ্লা শোয়ে অং মারমা (৪০)।

হ্লা শোয়ে অং মারমা বলেন, ‘প্রায় ৫ বছর আগে পাহাড়ে জুম কাটতে যাওয়ার সময় ৬-৭টি ডিমসহ একটি বনমুরগির বাসা দেখতে পাই। 

সেখান থেকে তিনটি ডিম নিয়ে এসে ঘরে তা (প্রাকৃতিক উপায়ে) দিতে দেশি মুরগির বাসায় রেখে দিই। সেখান থেকে ১টি ডিম পচে যায় আর দুটো ডিম থেকে একটি মোরগ-একটি মুরগির বাচ্চা ফোটে। এরপর দেশি মুরগির সঙ্গে বড় হতে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পর বাচ্চা দুটো অসুস্থ হয়ে ঘাসের ওপর পড়ে থাকে। সুস্থ করতে পাহাড়ি লতা-পাতা থেকে শুরু করে বনৌষধি প্রয়োগ করি। তাতেও কোনোভাবে সুস্থ হয়ে উঠছিল না। 

এভাবে বেশকিছু সময় কেটে যাওয়ার পর ধানের শক্ত দানা খাওয়াতে শুরু করি। জঙ্গলে গিয়ে পিঁপড়ার ডিমসহ বিভিন্ন রকম পোকামাকড় এনে খাওয়ানোর পর কিছুটা সুস্থ হয়।’

তখন তিনি বুঝতে পারেন, দেশি মুরগির খাদ্যাভ্যাস ও বনমোরগের খাদ্যাভ্যাসে ভিন্নতা আছে। তখন থেকে তিনি আলাদাভাবে ঘাসফড়িং, পোকামাকড়, ধানের দানা জাতীয় খাবার খাওয়ানো শুরু করেন। এমনকি গাছ ও লতা-পাতা দিয়ে অনেকটা বনের পরিবেশ তৈরি করে আবাসন সৃষ্টি করেন। সেই থেকে বংশ বৃদ্ধি হয়ে আজ বিশাল বনমোরগের খামারে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে তার খামারে দেড়শ’র বেশি বনমোরগ বা বনমুরগি আছে। এর মধ্যে ২২টি ডিম দেওয়ার উপযোগী, ১৩টি মোরগ, ২টি শিকারী মোরগ (বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া), বাচ্চা ও তা দেওয়া মুরগি আছে। স্থানীয়দের মধ্যে এ মোরগের বেশ চাহিদা থাকায় পরিপক্ব মোরগ প্রতিটি তিন হাজার টাকা, মুরগি প্রতিটি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন।

এ বছর ৮টি মুরগি ও ৫টি মোরগ বিক্রি করেছেন। আরও অর্ডার আছে বলে জানান হ্লা শোয়ে অং মারমা। ওজনের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওজন দেশি মুরগির মতো নয়। এদের সাইজ দেশি মুরগির তুলনায় ছোট এবং ওজন কম। পরিপক্ব মোরগের ওজন সর্বোচ্চ ৭০০-৮০০ গ্রাম হয়। আর মুরগির ওজন হয় ৬০০-৭০০ গ্রাম।’

বান্দরবান বনবিভাগীয় কর্মকর্তা (পাল্পউড) মো. তোহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক উপায়ে বনের মধ্যে যে মোরগ-মুরগি বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে বন মোরগ-মুরগি বলা হয়ে থাকে। 

সেগুলো বন থেকে কেউ যদি ধরে এনে বিক্রি বা হত্যা করে, তখন তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনার আইনি প্রক্রিয়া আছে। হ্লা শোয়ে অং মারমা যেহেতু কোনোভাবে ডিম সংগ্রহ করে গৃহপালিত প্রাণীর সঙ্গে প্রতিপালন করছে, তাই তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনা যায় না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমরা সাধারণত মুরগি মুক্ত, অর্ধমুক্ত ও বন্দি অবস্থায় পালন করি। দেশি মুরগির মতো বনমোরগের রোগবালাই কম। 

তবে রানিক্ষেত, কলেরা, পক্স হয়ে থাকে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। খামারি যদি প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসে যোগাযোগ করেন, তাহলে চিকিৎসা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে