শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৪:৩৪:১১

কাউন্সিল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

কাউন্সিল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি

এনাম আবেদীন : কাউন্সিলের জন্য তিনটি জায়গা চেয়ে আবেদন করে এখন বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। সরকারের গণপূর্ত বিভাগ ১৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ করেছে।

কিন্তু উদ্যানের বিশাল ওই খোলা জায়গায় কাউন্সিল করা দলটির জন্য ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। অন্যদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা গেলেও কাউন্সিলের ‘ইনডোর’ বা মূল অধিবেশন ওই খোলা জায়গায় করা কঠিন।

দলটির নেতাদের মতে, প্রথমত, এতে গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না। কাউন্সিলরদের বক্তৃতা সবাই শুনতে পাবে। দ্বিতীয়ত, শৃঙ্খলা রক্ষাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের বেকায়দায় ফেলতেই সরকার সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দিয়েছে। অথচ কৌশলগত  কারণে এখন এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগও করা যাচ্ছে না।

বস্তুত সরকার কাউন্সিলে বাধার সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই ১৯ জানুয়ারি তিনটি জায়গা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয় বিএনপি। ২৪ জানুয়ারি দেওয়া ওই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ১৯ মার্চ কাউন্সিল থাকায় ভারত সফরে যেতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলটির নেতাদের মতে, কাউন্সিল প্রস্তুতির একেবারে শেষ বা চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ভারতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।

ভারতে সেমিনারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্প্রতি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ ও ১৩ মার্চ নয়াদিল্লিতে ওই সেমিনার হবে। ‘ওয়ার্ল্ড কালচারাল ফেস্টিভাল-২০১৬’ নামের ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ওয়ার্ল্ড ফোরাম এথিকস ইন বিজনেস অ্যান্ড দি আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন।

যদিও বিএনপির অন্য একটি সূত্র বলছে, শুধু কাউন্সিলের জন্য নয়, ভারতে না যাওয়ার অন্য কারণ আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা না হলে খালেদা জিয়াকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

তা ছাড়া এর আগে ২০১৩ সালের মার্চে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় খালেদা জিয়া তার সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন। ফলে এখন অপেক্ষাকৃত ‘লো-প্রোফাইল’ কোনো সফর বা বৈঠক করলে সরকার এ নিয়ে রাজনীতি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রথমত, ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল। দ্বিতীয়ত, এটি একটি বেসরকারি সফর। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে তার যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিলের অনুমতি মিলেছে। তবে আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এখনো চাচ্ছি। দেখা যাক, সরকার কী করে।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, কাউন্সিল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চেয়ারপারসনের ভারতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ দলের কাউন্সিল মূলত তাকে কেন্দ্র করেই হয়।

১৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি কাউন্সিল করতে পারবে বলে গত বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। রিজভী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুলিশের অনুমতি এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ডিএমপি অনুমতি দেবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাওয়ার পর বিএনপির উপলব্ধি হলো, এর নেপথ্যে সরকারের কূটকৌশল থাকতে পারে। কারণ উন্মুক্ত ওই উদ্যানে কাউন্সিল করতে গেলে পুরো এলাকা একটি জনসভায় পরিণত হবে। এতে কাউন্সিলের চরিত্র আর থাকবে না। তা ছাড়া প্যান্ডেল নির্মাণ করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে; যা সংকুলান করার সামর্থ্য এ মুহূর্তে দলের নেই। উন্মুক্ত স্থানে কাউন্সিলের শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন হবে। কাউন্সিলররা বক্তৃতা করলে তা শোনা যাবে সব জায়গা থেকে।

সব মিলিয়ে বিএনপি বেশ বিপাকেই পড়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একাধিক নেতা গতকাল বলেন, একই সঙ্গে তিনটি স্থানের অনুমতি চাওয়া ঠিক হয়নি। কারণ সরকার এখন অন্য কোনো স্থান না দিলেও অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা বলেন, ‘কারা যে এসব পরামর্শ দেয়, জানি না।’

ওই নেতারা আরো জানান, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের অনুমতির জন্য দু-এক দিনের মধ্যেই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করবে। বাংলাদেশ সার্ভিস লি. নামের বেসরকারি একটি কম্পানি লিজ নিয়ে বর্তমানে এটি চালাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত অনুমতি না মিললে বিকল্প হিসেবে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের কথা ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে কাউন্সিল অধিবেশনের জন্য।

চেয়ারপারসন পদে নির্বাচন চলে যাচ্ছে কাউন্সিলে জাতীয় কাউন্সিলের আগে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত থাকলেও এ প্রশ্নে দলটির মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এর নিষ্পত্তি হচ্ছে ১৯ জানুয়ারির কাউন্সিলে।

সূত্র মতে দলটির সিনিয়র অনেক নেতা পরামর্শ দিয়েছেন, এক-এগারোর পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর আইনি বাধ্যবাধকতায় বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের বিষয়টি কাউন্সিলরদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তাদের মতে, নির্বাচনের তফসিল আগে ঘোষণা করা হলে কাউন্সিলরদের ঢাকায় থাকতে হবে। আবার ১৯ ডিসেম্বর কাউন্সিল হলেও তাতে অংশ নিতে হবে দলের প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরকে। ফলে দুবার তাদের যাতে ঢাকায় না আসতে হয় সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯ জানুয়ারিই ওই নির্বাচন করার পক্ষে তারা।

দলটির আইনজীবী অনেক নেতার আশঙ্কা, কাউন্সিলের আগে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন করতে চাইলে সরকারের ইন্ধনে অন্য কোনো ব্যক্তি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম কিনে দলকে বিব্রত করতে পারে। তবে তফসিল কাউন্সিলের দিন হলে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করবে না।

অবশ্য চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিশন আগেই সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখবে। আর ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্য কেউ ওই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে দু-এক দিন আগেও খালেদা জিয়াকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হতে পারে।

জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপারসন পদে নির্বাচনের বিষয়ে দলের অনেকে আপত্তি করছেন। ফলে এটি কাউন্সিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তার মতে, এ পদে নির্বাচন আগে হলে খুব একটা ভালো দেখায় না।

নিয়ম অনুযায়ী বিএনপির নীতিনির্ধারণী অথবা শীর্ষ পর্যায়ের যেকোনো ফোরামে বৈঠকের পর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর দলের প্রবীণ একজন নেতাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কয়েকজনকে সদস্য করে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিশন তফসিল ঘোষণা করে।

তখন আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করা হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে সাধারণত দলের একজন নেতা ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর জমা দেওয়া, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইসহ আনুষ্ঠানিকতায় সময় লাগে প্রায় এক সপ্তা। একাধিক প্রার্থী না থাকলে কাউন্সিলের আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

বিএনপির সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৮-এর (ক) ধারা অনুযায়ী কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে তিন বছরের জন্য দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনের কথা বলা আছে। -কালেরকণ্ঠ
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে