এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কয়েক দিনের মধ্যে ডিমের দামে ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। ফার্মের প্রতিটি ডিমের দাম কমেছে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত। ডিমের দাম কমে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা খুশি হলেও হতাশ হয়ে পড়েছেন খামারিরা। অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে কমে যাচ্ছে ডিমের দাম।
পাইকারি বাজারে এক ডজন ডিমের দাম হয়েছে ১০৮ টাকা। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।
খামারিরা বলছেন, ডিম বিক্রির টাকায় মুরগির খাদ্য ও ওষুধের দাম উঠছে না। মুরগির খাবার, বাচ্চা, ওষুধ, শ্রমিকের মজুরি, খামার তৈরির নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে খামার টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন ব্যয় সাড়ে ১০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, ‘কারসাজি করে যখন ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছিল, তখন খামারিরা বিপুল মুনাফা অর্জন করেছেন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা সাধারণ ক্রেতারা। আমদানির প্রভাব ও চাহিদা কমায় দেশের বাজারে কমেছে ডিমের দাম।’
কোনো কারণ ছাড়াই বিগত ৪ মাস আগে থেকে ডিমের দাম বাড়তে থাকে। পাইকারিতে এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকায় ওঠে। খুচরা বাজারে এক ডজন ডিম ১৮০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ১৫ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।
এ অবস্থায় সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকায় বেঁধে দেওয়ার পরও দাম কমেনি। গত ৫ নভেম্বর ভারত থেকে ডিমের একটি চালানের মাধ্যমে দেশে আমদানি হয় ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম। এরপর থেকেই দ্রুত কমতে শুরু করে ডিমের দাম।
বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। আমদানির কারণে ডিমের দাম কমেনি জানিয়ে পাইকাররা বলেন, ‘বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায়দাম কমেছে। বাজারে এখন শীতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের ওপর চাপ কমেছে।’
সোমবার সকালে কলেজ রোডের ডিম আড়তের খায়রুল জানান, বাজারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এখন আড়তে ৩০টির খাচি বিক্রি করছেন ২৭০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ৯ টাকা করে।
আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৪০-৪৪ টাকা। খামারিদের কাছ থেকে শতকরা ৮৬০-৮৭০ টাকা দরে অর্থাৎ প্রতিটি ৮ দশমিক ৬০ থেকে ৮ দশমিক ৭০ টাকায় কিনে প্রতিটি ৯ টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত খামারি ও পাবনা জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন বলেন, ‘বাজার দর অনুযায়ী খামারিরা শতকরা ৮৬০-৮৭০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এর আগে খাদ্যের দাম ব্যাপক বাড়লেও এখন আবার কিছুটা কমেছে।
তবুও খামারিদের প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ১০ টাকা। ব্যাপক লোকসান হওয়ায় খামারিদের অবস্থা খারাপ। ডিমের দাম বাড়ায় বিগত কিছুদিন ভালোই হয়েছিল। আগের অবস্থা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছিলেন খামারিরা। এভাবে আরও ৪-৫ মাস থাকলে প্রতিটি খামারি আগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারত।’
বিদ্যুত বিভাগের চাকরিজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সবজি থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম ছিল আকাশচুম্বি। এর মধ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নাকানি-চুবানি খেয়েছি।’