বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:০৭:৫৪

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যে কাজটি করছেন পেঁয়াজ চাষীরা, সামনে যে আশঙ্কা

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যে কাজটি করছেন পেঁয়াজ চাষীরা, সামনে যে আশঙ্কা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজবাড়ীর বিভিন্ন হাট-বাজারে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ দাম হওয়ায় অনেক কৃষক সময়ের চেয়ে আগে মাঠের পিয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। 

এতে কৃষক ভালো মূল্যে পেলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সুতরাং পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে আকাশ ছোঁয়া। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো মূল্যে বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। খোলা বাজারের বিক্রেতারা বাধ্য হচ্ছে দাম বাড়াতে। 

আর অসহায় ক্রেতা বাধ্য হচ্ছে কিনতে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করছেন অনেক কৃষক।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ পড়েছে। কিন্তু একই সময় বিক্রেতা এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ইউসুফ খাঁ বলেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ-রসুনে লোকসান হয়। এবার বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছি। কারণ, পরে যদি দাম কমে যায়।

পেঁয়াজ অসময়ে ওঠালে উৎপাদন কমে যাবে এমন প্রশ্নে এই কৃষক বলেন, আমরা একটি সম্মানজনক দাম পাবো এই নিশ্চয়তা কে দেবে? পেঁয়াজের সঠিক দামের নিশ্চয়তা পেলে অসময়ে উঠাতাম না। 

যে কারণে বাজারে বেশি দাম থাকায় অতিরিক্ত লাভের আশায় আমরা কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছি। আশা করি এবার পেঁয়াজে আমরা কিছুটা লাভবান হবো। কৃষক মোছা. হাসিনা বলেন, তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫/৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এভাবে দাম থাকলে কৃষক এবার কিছুটা লাভবান হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ ভালো করে পাকলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ মণ হবে। এখন ওঠালে বিঘাপ্রতি ৫০-৬০ মণ হবে। তবে এই দাম তখন আমরা পাবো না। বাধ্য হয়ে বেশি লাভের আশায় আমরা অগ্রিম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। আশা করি এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখবো।

কৃষক হাসেম শেখ বলেন, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ উঠিয়েছি। বাজারে তিন মণ পেঁয়াজ সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি।

তিনি বলেন, এখনও তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এমন দাম থাকলে সব পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করবো। ১৫-২০ দিন পর এই পেঁয়াজ ওঠালে এক বিঘাতে ১০/১২ মণ পেঁয়াজ বেশি হবে। তবে এমন দাম হয়তো আমরা তখন পাবো না। যে কারণে ইচ্ছা না থাকার পরও অসময়ে অপরিপক্ব কাঁচা পেঁয়াজ উঠাতে হচ্ছে।

এই কৃষক আরও বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি এর আগেও হয়েছে। সিন্ডিকেট না ধরে কৃষকের কাছে এলে কী হবে। পেঁয়াজের কারসাজি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। আইনের আওতায় সিন্ডিকেট গডফাদারদের নিয়ে আসতে হবে।

আগাম পেঁয়াজ উঠানোর পক্ষে মতামত দিয়ে একাধিক পেঁয়াজ ক্রেতা বলেন, আসুন আমরা পুরাতন পেঁয়াজ বর্জন করি। নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করি। নতুন পেঁয়াজে লাভবান হবে সরাসরি কৃষক আর পুরাতন পেঁয়াজে সিন্ডিকেট সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের নীরব প্রতিবাদ এটা।

এ সময় পাশে থাকা বয়স্ক এক ব্যক্তি বলেন, কৃষক আগাম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করলে ক্রেতা মেনে নিচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও সরাসরি কৃষক লাভবান হবে। আর পুরাতন পেঁয়াজে কৃষক নয়, সিন্ডিকেট সদস্যরা লাভবান হবে। সুতরাং নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করতে হবে।

বালিয়কান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে অপরিপক্ব পেঁয়াজ ওঠালে কিছুটা উৎপাদন কমে গেলেও কৃষক সরাসরি বেশি দাম পাবে। আবার এই জমিতে পেঁয়াজ উঠিয়ে হালি পেঁয়াজ অথবা ভুট্টা লাগাতে পারবে। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনও ফসলে বেশি দাম পেলে কৃষক-চাষি উৎসাহ পাবে। তবে সিন্ডিকেট নয়, সরাসরি কৃষক দাম পেলে উৎপাদন বেশি হবে।

তিনি আরও বলেন, ১০-১৫ দিন পর পেঁয়াজগুলো কৃষকেরা তুললে বিঘাপ্রতি আরও ১০-১৫ মণ বেশি পেতো। তারা লাভের আশার এখনি পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে