সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১২:৫৮:১৮

যে তিন দেশে কর্মী গমনে রেকর্ড, সেখানে যে দুই সমস্যায় প্রবাসীরা

যে তিন দেশে কর্মী গমনে রেকর্ড, সেখানে যে দুই সমস্যায় প্রবাসীরা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গত নভেম্বরে ১২ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গেছে। একই সঙ্গে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মূল দুটি সমস্যা ছিল কাজ না পেয়ে মাসের পর মাস বসে থাকা এবং কাজ পেলেও ঠিকমতো বেতন না পাওয়া।

বিশেষ করে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানে যাওয়া কর্মীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই তিনটি দেশেই সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কর্মী ভোগান্তি দূর করতে দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ না থাকলেও কর্মী পাঠাচ্ছেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, দূতাবাসগুলোর জনবলসংকটে অনেক সময় কর্মীরা প্রত্যাশিত সেবা পান না। তবে কর্মীদের দুর্ভোগের  অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয় মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাস।

এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব অভিবাসী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অভিবাসীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে অভিবাসনের শক্তি উন্মোচন করা।’

বিদেশে কর্মী গমনে নতুন রেকর্ড
বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গেছে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে এক লাখ ১৩ হাজার ১৫ জন বেশি। গত বছর বিদেশে কর্মী গিয়েছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এর আগে ২০১৭ সালে কর্মী গিয়েছিল ১০ লাখ আট হাজার ৫২৫ জন।

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এভাবে কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এর সংখ্যা গিয়ে ১৩ লাখে পৌঁছাবে। তবে কর্মীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধির জন্য উন্নতমানের ও বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার চালু করার দাবি জানান অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এই ধরনের রেকর্ড হয়েছে। তবে এত  কর্মী গেলেও নারী কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। 

গত বছর নারী কর্মী গিয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার। এ বছর গেছে ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার। এখানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নারী কর্মী কম গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনো এই শ্রমবাজারে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখন আমরা যে কর্মীগুলো পাঠাই, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অদক্ষ কর্মী। 

আমরা যদি এখানে দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারি, সে ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স অনেক বেশি আসবে। এখনো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ আমাদের যে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো রয়েছে, তারা যত দ্রুত কর্মী পাঠাতে পারে, আমরা তত দ্রুত পারি না। 

আমাদের দেশে নানা জটিলতার কারণে অনেক সময় লেগে যায়। সরকারি বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে যদি সময় কম ব্যয় হয়, এর সঙ্গে যদি দক্ষতার উন্নয়ন করতে পারি, সে ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান ধারা আমরা সামনে আরো বাড়াতে পারব।’

কর্মীদের ব্যাপক দুর্ভোগ
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীরা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানে গিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। উন্নত জীবনের আশায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গিয়ে অনেক কর্মীকে মাসের পর মাস বসে থাকতে হয়েছে। 

নানা ধরনের নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তাঁরা। এতে অনেক কর্মী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি কর্মসংস্থানের চেয়ে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওমানের শ্রমবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব যান মৌলভীবাজারের ইসমাইল হোসেন। সাত মাস কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও কোনো কাজ পাইনি। খাবারও ঠিকমতো পেতাম না। পরে অনেক কষ্টে নিজেই কাজ খুঁজে নিই। ওইখানে আমার থাকা খুবই কষ্টের ছিল। তাই চলে এসেছি।’

এ ব্যাপারে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আমরা যদি কর্মী ভোগান্তি পুরোপুরি দূর করতে চাই, তাহলে এই অভিবাসন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে