এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ইউনাইটেড হাসপাতালে অবহেলাজনিত কারণে বা দুর্ঘটনায় কত রোগী মারা গেছে তার তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৫ বছরে কত মৃত্যু ঘটেছে, অনুসন্ধান করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজির) (স্বাস্থ্যসেবা) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে মৌখিক আবেদন দিয়েছিলেন আদালত। আজ সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে আদেশ দেন।
সেদিন একই সঙ্গে, সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর লাইসেন্সবিহীন কতগুলো হাসপাতাল তার তালিকাও তলব করেছেন আদালত। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর তালিকা প্রস্তুত করে জমা দিতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলেছেন হাইকোর্ট।এ-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান: খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে ৮ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ গত ৯ জানুয়ারি একটি রিট করেন। রিটে আবেদনকারী হিসেবে শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ যুক্ত হন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে খতনা করতে আসা আয়ানের মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদন এসেছে বলে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করতে এক দিন সময় (নট টুডে) দেন আদালত।
এদিকে গত ১৫ বছরে চিকিৎসায় অবহেলায় ইউনাইটেড হাসপাতালে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন তুলে ধরে রিট আবেদনকারীপক্ষ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া (আরজু)। রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করতে এক দিন সময় দিয়েছেন আদালত। হলফনামা করে জমা দেওয়া হবে। এর ওপর কাল সোমবার শুনানি হতে পারে।
গত ১৫ বছরে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে-এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে তিন মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিটে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর খতনার জন্য আয়ানকে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবক। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খতনা করান বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
পরে জ্ঞান না ফেরায় তাকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।