বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০২:০৯:৫৯

নেপাল আবার সংকটে পড়বে

নেপাল আবার সংকটে পড়বে

নিউজ ডেস্ক : নেপালের ২৬৩ বছরের রাজতান্ত্রিক শাসন আর সংঘাতের পর গণপ্রজাতান্ত্রিক দেশ হিসেবে উত্থানে ভূমিকা রেখেছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। হিমালয়কন্যার ওই দেশটির বিখ্যাত রাজবংশের মানুষ ছিলেন কৈরালা।

কিন্তু নেপালের জাতীয় সংহতি ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভূমিকায় তিনি সহকর্মী সমর্থকদের কাছে ‘সুশীলদা’ হয়ে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার বিদায় নিলেন সেই মহানায়ক সুশীল কৈরালা। তার মৃত্যুতে দলে ও জাতীয় পর্যায়ে সংকট ঘনীভূত হতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে।

নেপালি কংগ্রেসের প্রধান সুশীল কৈরালা (৭৮) এমন একসময় চলে গেলেন, যখন দেশটিতে ৫ মাস ধরে আন্দোলনরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সীমান্ত থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালের নতুন সংবিধান ঘোষণার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন কৈরালা।

নতুন সংবিধানের অধীনে পার্লামেন্টের এক ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন তিনি। আর তার উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন কেপি শর্মা ওলি। এদিকে, নতুন সংবিধানে বৈষম্যের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছিল মাধেশীসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাদের অবরোধ, প্রতিবাদ ও সহিংস তৎপরতায় ইতিহাসের ঘোর সংকটে পড়েছিল নেপাল। সম্পর্কের অবনতি ঘটে ভারতের সঙ্গে।

এমতাবস্থায় প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার জন্য গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত যোগাযোগকারীর দরকাল ছিল ওলির। অবশেষে এ রাজনৈতিক সংকট ও সীমান্ত অবরোধ অবসানে গুরত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় এগিয়ে এসেছিলেন কৈরালা। অচলাবস্থার ২ মাস পরেই ওলি শর্মা, সুশীল কৈরালা ও বিক্ষুব্ধ তারাই/মাধেশীদের মধ্যে শান্তি আলোচনার পথ খুলে যায়।

ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত সুশীল কৈরালা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফিরেছিলেন গত বছরের ২৬ নভেম্বর। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আন্দোলনকারীদের জোট ইউনাইটেড মাধেশি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউএমডিএফ) নেতারা তার বাসভবনে গিয়ে আলোচনা শুরু করেন।

শেষ পর্যন্ত কৈরালার মৃত্যুর আগের দিন সব অবরোধ উঠিয়ে নেন আন্দোলনকারীরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারে নেপাল সরকার। এছাড়া কৈরালার অনুপস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে।

নেপালের রাজনীতিতে প্রভাবশালী কৈরালা রাজবংশে ১৯৩৯ সালের ১২ আগস্ট সুশীলের জন্ম। তিনি জীবনে বিয়ে করেননি। অকৃতদার এ মানুষটি সাধারণ জীবন-যাপনের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তার চাচাতো ভাইদের মধ্যে মাতৃকা প্রসাদ কৈরালা, গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ও বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালাও দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

গত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে রাজা নেপালের ক্ষমতা নেয়ার পর দীর্ঘ ১৬ বছর রাজনৈতিক নির্বাসনে কাটাতে হয় সুশীল কৈরালাকে। ১৯৭৩ সালে বিমান ছিনতাইয়ের এক ঘটনায় তাকে ৩ বছর ভারতের কারাগারেও থাকতে হয়েছিল।

দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের একপর্যায়ে নেপালের সাংবিধানিক অ্যাসেম্বলির নেতৃত্ব দেয়ার পর ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সুশীল কৈরালা। কৈরালার প্রচেষ্টায় দেশটির সব রাজনৈতিক দল দেশটির প্রথম সংবিধানের মৌলিক নীতিমালায় একমত হন।

এদিকে সুশীলের মৃত্যুতে নেপালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেসেও সংকট দেখা দিতে পারে। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলে পড়তে পারে দলটি। আগামী মাসে তাদের নতুন নেতা নির্বাচনের কথা রয়েছে। যুগান্তর

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে