শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ০৯:৫৭:৪৭

এই প্রথম দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মসজিদ

এই প্রথম দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মসজিদ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে এই প্রথম কোনো মসজিদ নির্মিত হয়েছে যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নামাজ আদায় করছে। এ মসজিদে সাধারণ মানুষও নামাজ আদায় করতে পারবে। সরকারের দান করা জমিতে এ মসজিদটি তৈরি হয় কয়েক ডজন হিজড়ার অর্থ এবং শ্রমে। নাম দেওয়া হয় দক্ষিণ চর কালীবাড়ি মসজিদ।

রাজধানীর উত্তরে ময়মনসিংহের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নির্মিত ছোট্ট মসজিদটি দেখতে সাদামাটা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিজেরাই তৈরি করেছে এ মসজিদ। টিনের চালা-বেড়া দিয়ে নির্মিত মসজিদটির ব্যয়ভার বহন করেছেন স্থানীয় কয়েকজন হিজড়া।

স্থানীয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য এ মসজিদ বয়ে এনেছে অসামান্য খুশি। কারণ অন্যান্য মসজিদে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

হিজড়া সম্প্রদায়ের নেতা ২৮ বছর বয়সী জয়িতা তনু বলেন, এখন থেকে আর কেউ মসজিদে প্রার্থনা করা থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। কেউ মসজিদ থেকে বের করে দেবে না।

৪২ বছর বয়সী সোনিয়া বলেন, ছোটবেলায় আমি কোরআন তেলাওয়াত করতে ভালোবাসতাম। সবাই আমার কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনতো। কিন্তু যেদিন জানাজানি হলো আমি হিজড়া, সেদিন থেকে আমাকে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হতো না। লোকজন বলতো ‘তোমরা হিজড়া, তোমরা কেন মসজিদে যাবে?’ এ কথা শুনে লজ্জায় আর কখনো মসজিদে যাইনি।

তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের নিজেদের মসজিদ হয়েছে। আর কেউ আমাদের মসজিদে যেতে বাধা দেবে না।

স্থানীয় একটি হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ জানান, বাংলাদেশে এমন মসজিদ এই প্রথম। অন্য একটি শহরেও এমন একটি মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা ভেস্তে যায়।

দক্ষিণ চর কালীবাড়ি মসজিদের ইমাম আবদুল মোতালেব বলেন, সবারই প্রার্থনা করার অধিকার আছে। হিজড়ারা তো আমাদেরই সন্তান। তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ইসলামে শেখানো হয় না। আর ১০ জনের মতো তারাও আল্লাহরই সৃষ্টি।

২০১৩ সালে হিজড়া পরিচিতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কেউ কেউ রাজনীতি করেন। ২০২১ সালে একটি ছোট শহরের মেয়র হিসেবে একজন নির্বাচিত হন। এবার সংসদ নির্বাচনে রংপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে সমাজে এখনো তাদেরকে ছোট করেই দেখা হয়। পরিবার-সমাজ তাদের খাটো করে দেখে বলেই দারিদ্র্য এবং নিগৃহীতের শিকার হন তারা।

দক্ষিণ চর কালীবাড়ি মসজিদ এরই মধ্যে আশপাশের মানুষের মাঝে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিচ্ছে। ঐ এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি পর পর দুই সপ্তাহ এ মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়েছেন। তিনি বলেন, আগে হিজড়াদের ব্যাপারে আমার যে ধারণা ছিল এখন মনে হচ্ছে তা ভুল ছিল। একই এলাকায় বসবাস এবং একই মসজিদে নামাজ আদায় করার পর থেকে আমার এসব ভুল ধারণা ভেঙে যেতে শুরু করেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে