এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কেসামত ছাওলা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম। ২০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
শুরুতে কিছুটা দাম থাকায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে এখন ক্রেতা না থাকায় আর ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন না আর। এতে করে ক্ষেতেই বেগুন পচে নষ্ট হচ্ছে।
ছাওলা গ্রামের অনেক কৃষকই জানান, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়। ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে যে খরচ সেটিও উঠছে না। ফলে অনেকেই গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন এই সবজি। শুধু তাই নয়, ৮ মণ বেগুন বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারছেন না বলে জানান তারা।
কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, বেগুন বাজারে নিয়ে গেলে ১০০ টাকা বস্তা অথবা এক টাকা কেজি দাম বলে। তাই এখন ক্ষেতেই বেগুন থাকছে। মাঝে মাঝে কিছু বেগুন তুলে গরুকে খাওয়াই নিজে খাই। কাঙিক্ষত দাম না পাওয়ায় পচে যাচ্ছে বেগুন।
একই গ্রামের কৃষক মমিনুল ইসলাম। দাম না থাকায় বাসায় বেগুন এনে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এই কৃষকের দাবি, বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচের টাকা বাদ দিয়ে শুধু শ্রমিকের মজুরির টাকা তোলাই সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বেগুনের দাম মাত্র ১ টাকা কেজি বলায় অনেকে ক্ষোভে বেগুনকে বানিয়েছেন গো-খাদ্য। ওই এলাকায় আব্দুল ওয়াহাব, মিজু মিয়া ও নজরুল ইসলামসহ বেগুন চাষিদের অবস্থা একই। তাদের আক্ষেপ এক কেজি মাংস কিনতে হলে বেগুন বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৭ মণ। এই কারণে জমি থেকে বেগুন তুলছেন না তারা। কারণ এক টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করলে শ্রমিকের মজুরি তুলতেই তাদেরকে হিমশিম খেতে হবে। তবে পীরগাছার তাম্বুলপুর-পাওটানা হাটে বেগুন প্রতিকেজি ২ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ছাওলা ইউনিয়নে ১ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হলেও একই উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে ভিন্নচিত্র। এখানকার কান্দি বাজারে জাত ভেদে বেগুনের কেজি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রংপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচামালের ব্যবসা কেন্দ্র সিটি বাজারের পাইকারি আড়তেও বেগুনের দামে এখনো খানিকটা আগুন অনুভব করছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলেই আগুন লাগে বেগুনের বাজারে। ব্যতিক্রম ছিল না এবারও। দুই সপ্তাহ আগেও জাত ভেদে বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বেগুনের দরে। বর্তমানে সিটি বাজারের আড়তে বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর খান বহুমুখী মার্কেট, কামাল কাছনা বাজার, মুলাটোল বাজার, কামারপাড়া বাজার, নিউ আদর্শপাড়া বউ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাত ভেদে খুচরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন।
শহরের বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ৩০-৪০ টাকা হলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষক। বেগুন চাষিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি কৃষক সংগঠনের নেতাদের। তারা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের মুনাফা যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চাষাবাদ থেকে বিমুখ হলেও বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রান্তিক পর্যায় থেকে বাজার ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে মনে করছেন জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি। তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে কৃষক। প্রান্তিক গরিব কৃষক উৎপাদন করেন কিন্তু তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সরাসরি বাজারে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন না। প্রতিটি শহরে কিংবা গ্রামে যদি কৃষকের বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে একদিকে ভোক্তারা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কৃষকরাও লাভবান হবেন।
নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, রাজধানীতে বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা হলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের লোভের কারণে মাঠের কৃষক পাচ্ছেন মাত্র এক টাকা। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় নিঃস্ব হচ্ছেন চাষিরা। ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করলে চাষিরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন বলেও মনে করছেন এই কৃষক নেতা।