শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১০:৩৫:০৯

আলু-পেঁয়াজের কেজি ঈদের পর যত হলো

আলু-পেঁয়াজের কেজি ঈদের পর যত হলো

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঈদের পর দাম বাড়া প্রসঙ্গে এক ক্রেতা বলেন, “তখন প্রশাসন সক্রিয় ছিল, তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এখন মনে হয় প্রশাসন ছুটিতে আছে।“

মৌসুম শেষের বেশি দিন হয়নি, ভারত থেকেও আসছে আলু। তবুও ঈদের ছুটিতে সরবরাহ কমের অজুহাতে ফের চড়তে শুরু করেছে আলুর বাজার; খুচরায় প্রতি কেজির দাম উঠেছে ৬০ টাকায়। দেশি আলু কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আর ভারতীয় আলু বেড়েছে আট টাকা।

ঈদের পর আবার বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজও। দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। রান্নায় বেশি ব্যবহার হওয়া এ দুই সবজির সঙ্গে দেশি রসুন ও আদার দামও বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন, টানা ছুটিতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং আমদানি বন্ধ থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে।

বুধবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে দেশি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় আলুর দর ৪২ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা। একই বাজারে তা এক ঘুরেই খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।

রাজধানীর অন্য বাজার ও পাড়া-মহল্লার বিক্রেতারা গত কয়েকদিন ধরে খুচরায় কেজিপ্রতি আলু বেচছেন ৬০ টাকা দরে; যা ঈদের আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। ঈদের পরপরই বেড়ে হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং গত দুই থেকে তিন দিনে আরও ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।

গাজীপুরের মাস্টারবাড়ি বাজারের আলু বিক্রেতা মো. সায়মন লাল আলু বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজিতে। দেশি বড় আলুর দাম রাখছেন ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা।

ঈদের পর চড়ছে আলুর দাম, পিছিয়ে নেই পেঁয়াজও
তিনি বলেন, “ঈদের আগে দেশি আলু বেচছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আমার কেনা পড়ছে ৪৬ টাকা কেজি।”

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা। আর ২০২৩ সালের এ সময়ে দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। সেই হিসাবে এ বছর দ্বিগুণ দামে আলু কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমাতে হলে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং ভারতীয় আলুর দাম কমাতে হবে। এখন ভারতীয় আলুর দাম দেশি আলুর চেয়ে মাত্র ১ বা ২ টাকা কম। এতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।

পাইকারি দোকান মেসার্স বিসমিল্লাহ বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা রনি আলম বলেন, “আমার কাছে মুন্সিগঞ্জের আলু আছে। এগুলো কৃষকের কাছে থাকা আলু, যা ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। সপ্তাহ খানেকের ভেতর বগুড়ার আলু চলে আসবে বাজারে। তবে সেটার দাম আরও বাড়বে। কারণ সেগুলো কোল্ড স্টোরেজের আলু। বগুড়ার কোল্ড স্টোরেজ মঙ্গলবার খুলেছে জেনেছি।”

সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. রাকিব বলেন, ঈদের আগে ভারতীয় আলুর দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি। এখন তা ৪২ টাকা কেজি। ঈদের সময় থেকে একটু সরবরাহ ঘাটতি থাকায় মূলত দামটা একটু বেড়েছে।

তার দাবি, বগুড়া ও মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট করতেছে। তারা বেশি দামে কিনে হিমাগারে রেখেছে। তাই কম দামে ছাড়ছে না।

মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আলু সরবরাহকারী বাদল ব্যাপারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে জমিতে আগে আলু উৎপাদন হতো ৫৫০ থেকে ৬০০ কেজি, সেখানে এবার হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ কেজি। উৎপাদনই কম হয়েছে মূলত।

“আর বেশির ভাগ আলু কোল্ড স্টোরেজে চলে গেছে। তাই গোলায় আলু নাই। এখন কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের করলে সকল খরচ মিলিয়ে বিক্রি করে। তাই দাম বেশি পড়ে।”

তিনি বলেন, ”দেশি আলুর দাম বেশি মানলাম। ভারতীয় আলুর দাম বেশি কেন? শুনলাম বর্ডারেই না কি ৪২ টাকা কেজি দর পড়ছে।“

চড়ছে পেঁয়াজও
পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মেসার্স মাতৃভাণ্ডারের বিক্রেতা সজীব শেখ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। তার তথ্য মতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা।

পেঁয়াজ- রসুনের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল হামিদ বলেন, খুচরাতে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। আদা ও রসুনে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে।

খুচরায় দেশি ও চায়না আদা ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। চায়না রসুন এর দাম ২২০ টাকা। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. ইব্রাহিম বলেন, ঈদের আগেই দেখি দাম কম ছিল। এখন আরও বেশি।

তার ভাষ্য, “তখন প্রশাসন সক্রিয় ছিল তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এখন মনে হয় প্রশাসন ছুটিতে আছে। সেই সুযোগে যেমন খুশি দাম বাড়ছে।”

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে