সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:১৩:০০

জানেন হঠাৎ ঠাকুরগাঁওয়ে টমেটোর কেজি, লাউয়ের দাম কত?

জানেন হঠাৎ ঠাকুরগাঁওয়ে টমেটোর কেজি, লাউয়ের দাম কত?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : যে টমেটো গত বছর জমিতে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। এবার সেই টমেটো চাষিরা বিক্রি করছেন মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকায়। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও, মৌসুমের শেষ সময়ে এসে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে।  

উত্তরাঞ্চলে জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির বড় মোকাম গোবিন্দনগর। এখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ করা হয়। আর শীত মৌসুমেই এ অঞ্চলের চাষিরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। আর দাম না পেয়ে টমেটোসহ অনেক সবজি ফেলে দিচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ টমেটো চাষ হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কেজি প্রতি ৫০ টাকা দাম পেলেও বর্তমান বাজারে টমেটোর দাম ৪-৫ টাকা কেজি। আবার অনেক চাষি এই দামেও টমেটো বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে অনেকেই টমেটো ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে চাষিরা কম দামে টমেটো বিক্রি করলেও সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দামে বাজার থেকে টমেটো কিনতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার নারগুন এলাকার চাষি এনামুল বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাত্র কয়েক দিন টমেটোর দাম ভালো পেয়েছি। বর্তমানে বাজারে কেজি প্রতি টমেটো ৪ থেকে ৫ টাকা দামে বিক্রি করছি। বাজারে আবার সেই টমেটোই বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। অথচ আমরা দাম পাচ্ছি না। চাষিরা আড়ৎদারদের কাছে কেজি প্রতি মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা দামে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ জমি থেকে টমেটো তোলার জন্য শ্রমিককে এর থেকে বেশি টাকা দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। কোনো কৃষকই এবার উৎপাদন খরচ তুলতে পারবে না।

জেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চণ্ডিপুর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি চায় হয়। সদর উপজেলার ফুলকপি চাষি আবদুল মালেক বলেন, গড়েয়ায় সবজির বড় মোকাম রয়েছে। এ মোকাম থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করা হয়। মোকামে এখন চাষিরা প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫ থেকে ৭ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এত কম দামে এ এলাকার চাষিরা কখনও কপি বিক্রি করেনি। এ এলাকার কপি এবং সবজি চাষিরা এ মৌসুমে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পেঁপে এবং লাউ চাষ হয়। উপজেলা সদরের লাউ চাষি নিজাম জানান, এ অঞ্চলের লাউ চাষিরা বর্তমানে আড়ৎদারদের কাছে প্রতি পিস লাউ ৫-৭ টাকা দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ গতবছর ২০ -২৫ টাকা প্রতি পিস দরে বিক্রি করেছেন। এছাড়া শসা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১-২ টাকা কেজি দরে। মাসখানেক আগে চাষিরা ২০-৪০ টাকা কেজি দরে 
শসা বিক্রি করেছেন। একইভাবে বেগুনের দামও কমেছে।

গোবিন্দনগর মোকামের আড়ৎদার মতিন মিয়া বলেন, বর্তমানে সারাদেশেই সবজির দাম কম। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে আড়ৎদাররাও চাষিদের থেকে কাম দামে সবজি কিনছেন। এছাড়া এ মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও বেড়েছে। সবমিলিয়ে এবার সবজির দাম কম।

পৌরসভার কালিবাড়ি সবচেয়ে বড় সবজির বাজারের একজন ক্রেতা ইবরাহিম বলেন, কম দামের কারণে চাষিরা টমেটো ফেলে দিলেও সাধারণ ক্রেতারা ১৫-২০ টাকা কেজি দরে টমেটো কিনছেন। চাষিরা দাম না পেলেও আড়ৎদার এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে  সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ব্যাপক পরিমাণের সবজি উৎপন্ন হয় এই জেলায়। এ বছর চাহিদার তুলনায় বেশি সবজির উৎপাদন হওয়ার কারণে দাম অনেকটা কম। তবে ঠাকুরগাঁও জেলার বাইরে যেন তারা ভালোভাবে সবজি বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন মৌসুমে কীভাবে সবজি চাষ করা যায় সেই পরামর্শ দিচ্ছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে