সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৪১:৪১

সময়টা বেশ কঠিন খালেদা জিয়ার

সময়টা বেশ কঠিন খালেদা জিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক : কঠিন সময় অতিক্রম করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরিবার ও দলসহ তিনি নিজেই মামলা-হামলায় আক্রান্ত। তার নিজের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৯টি মামলা। ছেলে তারেক রহমানও ৩১ মামলা নিয়ে রয়েছেন বিদেশে।

অপর ছেলে চলে গেছেন পরপারে। কাছে নেউ কোনো নিকটাত্মীয়। রাজনীতিতে রয়েছেন ব্যাকফুটে। অনুসারীরা মনে করছেন, নির্বাচন হলেই ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু পরের নির্বাচন কবে হবে তা জানেন না বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেও। লাখো মামলা কাঁধে নিয়ে পলাতক থাকা নেতা-কর্মীদের হতাশাও বাড়ছে ক্রমেই।

কারণ মাঠের রাজনীতির চেয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জোর দিয়ে আসেনি কোনো সফলতা। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টাও দেখেনি আলোর মুখ। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামর্থ্যেও এখন দেখা দিয়েছে ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপিকে চাঙ্গা করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাও পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

কাউন্সিলের ভেন্যুর সংকটই কাটাতে পারেনি বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বৃহত্ এ রাজনৈতিক দলটি। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা ১৯ মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পাঁচটি মামলা চলছে দ্রুত গতিতে।

বাকিগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় করা সহিংসতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির পিটিশন মামলা। দুদকের করা পাঁচটি মামলার মধ্যে রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা। এর  মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ  শেষ হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরা চলছে। এরপরই আসবে রায়।

এর মধ্যে বাদীর জবানবন্দি বাতিল চেয়ে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য খালেদা জিয়ার করা আবেদন গতকাল খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। সহিংস ও নাশকতার অভিযোগের মামলাগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা। এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তদন্তাধীন রয়েছে গুলশান ও কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থানার দুই মামলা ও খুলনা সদর থানায় একটি।

এ ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে চার পিটিশন মামলাও রয়েছে তদন্তে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ৩১টি মামলা নিয়ে রয়েছেন লন্ডনে। এর ১৭টিতে দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্র। ছেলের বউ জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে একটি মামলা। অকালে মৃত্যুবরণ করা ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে সাতটি মামলা মাথায় নিয়ে চলে যেতে হয়েছে।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১২ নেতার বিরুদ্ধে ২৮৮টি, আট ভাইস  চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৩১টি, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাত উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ১২৪টি, সাত যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে ২৫৪টি এবং চার সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা রয়েছে। এর বাইরে বিএনপির দাবি, সারা দেশে ২৫ হাজার মামলায় বিএনপির পাঁচ লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েও মামলার শিকার হতে হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক এই কার্ড ভালোভাবে নেয়নি দেশের জনগণ। আওয়ামী লীগ বিরোধী সেন্টিমেন্ট খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য লুফে নেবে বলে ধারণা করা হলেও আদতে তা হয়নি।

দলের ভিতরে বাইরে পড়তে হয়েছে সমালোচনায়। এর আগে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন তারেক রহমান। তার বক্তব্য বিবৃতি বাংলাদেশের প্রচার প্রকাশে রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকা বিএনপি এখন বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু তাতে বিশাল জয়ের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।

সরকারি দল ও স্থানীয় প্রশাসনের চাপে পড়ে মাঠে  নামতে পারছেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা। চোখের সামনে প্রার্থীরা হেরে যাচ্ছেন, কিন্তু কিছুই করার থাকছে না বিএনপি নেতৃত্বের। এর মধ্যেই নানান দিক থেকে দল ও জোট ভাঙার ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছেন দলীয় প্রধান। কিন্তু দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক করা যাচ্ছে না নিয়মিত।

একটা জনসভা করতে গেলেও তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনের দিকে। সর্বশেষ ছাত্রদলের রেকর্ড আকৃতির কমিটি দেওয়ার পরও অঙ্গসংগঠনটির একটি গ্রুপের কর্মীরা দিয়েছে কার্যালয়ে আগুন। কথিত ‘আসল বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের ঘোষণা মানসিক পীড়ায় ভোগাচ্ছে সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতায় ফিরতে বার বার বিদেশিদের ওপর আস্থা রেখে ব্যর্থ হওয়ার পরও সেই পথেই চলা হচ্ছে।

সরকারের নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেনি বিএনপির লবিংয়ের বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। উল্টো সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন নতুন ধরনের সহযোগিতার বন্ধন ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কূটনীতিতে ভুল করা বিএনপি এখন বারবার চেষ্টা করেছে সম্পর্কোন্নয়নের। মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন ধরনের হবে বলে আশা করা হলেও তাতে পড়েছে গুড়ে বালি।

উল্টো বিজেপির অমিত শাহের সঙ্গে টেলিফোনালাপ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে নেতিবাচক অবস্থার। শেষ পর্যন্ত এক ধর্মীয় গুরুর মাধ্যমে মোদির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার কথাও শোনা গেছে। তাতেও সফলতা আসেনি। বরং এর আগেই দলীয় কূটনৈতিক দায়িত্বে থাকাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙন।

বিএনপির সমর্থকরা বলছেন, সবকিছু মিলিয়ে ঢাকায় পারিবারিক সঙ্গহীন অবস্থায় থাকা বেগম খালেদা জিয়ার সময়টা বেশ কঠিনই যাচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতাও ভোগাচ্ছে বারবার। যদিও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার সমন্বয় ঘটিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাবেন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির লাখো সমর্থক। -বিডি প্রতিদিন

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে