শফিউল আলম দোলন : জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি বিএনপির। এখনো ভেন্যু ঠিক হয়নি। প্রস্তুতির অভাব রয়েছে যথেষ্ট। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অগোছালো অবস্থা বিরাজ করছে। সংকট দেখা দিয়েছে জেলায়-জেলায়।
জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের জন্য অনেক এলাকায় কাউন্সিলর নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত তারিখে শেষ পর্যন্ত দলটির জাতীয় এই সম্মেলন সম্ভব হয় কিনা— তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সম্পর্কে বলেন, এখনো পর্যন্ত কাউন্সিলের ভেন্যু-ই ঠিক করা সম্ভব হয়নি। আগামী ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের জন্য তিনটি ভেন্যুর বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চিঠিরই জবাব পাইনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘ ছয় বছর পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করলেও তা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাউন্সিল সফল করতে বেগম খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে গঠিত ১১টি উপকমিটি সক্রিয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয় কিনা তা নিয়েও সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, প্রয়োজনে বটতলায় কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে। তবুও বিএনপির কাউন্সিল এবার করবেনই। তারপরও শঙ্কা কাটাতে পারছেন না তারা। কারণ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ ছাড়া আরও বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। বিশেষ করে প্রায় বিশটির মতো সাংগঠনিক জেলার কমিটি গঠনের কোনো সুরাহা হয়নি।
ফলে এসব জেলা ও উপজেলা থেকে কারা কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে অংশ নেবেন তাও এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য ক্ষমতাসীন দল ও সরকারি প্রশাসনের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ভেন্যুই নয় জেলা পর্যায়েও আজ সম্মেলনের জন্য স্থান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বিএনপিকে। বেশিরভাগ জেলাতেই সম্মেলন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বিএনপিকে। কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু কেউ সফল হয়নি।
জানা গেছে, আগামী ১৯ মার্চ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয় কিনা তা নিয়ে খোদ নীতিনির্ধারক মহলেই সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সম্মেলন যাতে না হয় সে জন্যে সরকারের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি নেতারা। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, রহুল কবির রিজভী আহমেদসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির অনেক নেতাই এ অভিযোগ করছেন বারবার।
অন্যদিকে রয়েছে— দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা। জানা গেছে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও স্থানটিই এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ তিনটি স্থানে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জোটেনি।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিকল্প স্থান হিসেবে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের প্রস্তাব করেন বেশ কয়েকজন সদস্য। কিন্তু সে সম্পর্কে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা যোগাযোগের আগেই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তথ্য প্রকাশ করেন স্থায়ী কমিটির কজন সদস্য।
পরে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেদিন কোনো হল খালি না থাকায় বিএনপির আবেদন নাকচ করে দেয় তারা। গতকাল এ কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এখনো আশা ছাড়েননি তিনি।
তিনি বলেন, আশা করছি সরকার শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রটিই আমাদের সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ দেবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কাঙ্ক্ষিত ভেন্যুগুলোতে বরাদ্দ না পেলে আমাদের হয় অন্য কোনো ভেন্যুতে যেতে হবে। আর না হয় দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ পিছাতে হবে। কিন্তু সম্মেলন এটা করতেই হবে।
দীর্ঘ সাত বছরের মাথায় বিএনপির জাতীয় এই কাউন্সিল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর সরকারের উচিত কোনো রকমের বাধা না দিয়ে গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কাউন্সিলের জন্য শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত স্থানগুলোর কোথাও বরাদ্দ না পেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তন কিংবা কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তন অথবা দলীয় কার্যালয়েও ছোটো পরিসরে করা হতে পারে। তাছাড়া আরেকটি বিকল্প রয়েছে কাউন্সিল বা সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া। এ বিষয়টিও মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে যতদ্রুত সম্ভব সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করবে।
তিনি বলেন, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে চাই। কিন্তু সরকারই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যতদ্রুত সম্ভব সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেন তিনি। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলা বিএনপির সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগে আমরা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শুরু করেছি। আশা করি আসন্ন কাউন্সিলের আগে আমরা অধিকাংশ জেলা সম্মেলন শেষ করতে পারব। এ জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সিনিয়র নেতারা জেলাগুলো সফর করছেন। কিন্তু আমাদের হল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না কোথাও।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই আমাদের এসব কাজ শেষ করতে হচ্ছে। সরকারের দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নে বিএনপি যে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছিল কাউন্সিলের মাধ্যমে সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনেও বিএনপি অংশ নেবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক? ভূমিকা হবে না। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী একটি চিঠি দিয়েছেন। -বিডি প্রতিদিন
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস