বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই, ২০২৪, ১১:৫৯:২৯

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত একের পর এক গ্রাম, তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত একের পর এক গ্রাম, তলিয়ে গেছে  ঘরবাড়ি

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এবার সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

বন্যায় দুই উপজেলার অন্তত ৪৬টি গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ৪টা পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি অংশে ভাঙনে ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে শুরু করলেও বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে প্রবেশ করা পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া গত দুই দিনে মুহুরী-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি স্থানে ভেঙেছে। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর ও পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালধরের দুটি স্থানে ভাঙনের মাত্রা বেশি। 

উত্তর দৌলতপুর গ্রামের রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি এখনও তলিয়ে আছে। তিন দিন ধরে চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। শুকনো খাবার খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার ও ১০ কেজি চাল পেয়েছি।’

পরশুরাম উপজেলার শালধর গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইয়াছমিন আক্তার বলেন, স্কুলে মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পানির মধ্য দিয়ে যেতে কষ্ট হয়েছে। অন্তত পানি কমা পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করলে তাদের উপকার হতো। 

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে নতুন করে আর বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। এছাড়া পানি কমলে ভাঙনস্থলের মেরামত কাজ শুরু হবে। 

ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে দুর্গত এলাকায় মানুষদের সহায়তার জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে এসব বিতরণের কাজ চলছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৮টি, দরবারপুরের ৩টি, আমজাদহাটের ৫টি, মুন্সিরহাটের ২০টি ও আনন্দপুর ইউনিয়নের ২টি গ্রামসহ মোট ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি এ  মুহুর্তে কিছুটা উন্নতির দিকে। প্লাবিত এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রথম ধাপে ৯০০ ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের মাঝে ২৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি। 

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ৩ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্তদের মাঝে দুই ধাপে ৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তার ইউনিয়নে ১২ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি ১০ কেজি করে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে