এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনের সহিংস ঘটনায় দেশের বাজারে পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। এতে রাজধানী ঢাকার বাজারে পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়ে দাম বেড়ে যায়। তিন দিন আগে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা সচল হতে শুরু করে। এতে রাজধানীর বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।
ফলে অস্থির বাজারে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বলে জানায় ভোক্তারা। তবে এখনো দু-তিন সপ্তাহ আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, গুলশান কালাচাঁদপুর ও জোয়ার সাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে বেগুন, টমেটো ও করলা ছাড়া এখন বেশির ভাগ সবজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারছে ভোক্তারা। যদিও কিছুদিন আগে ৭০ টাকার নিচে কম সবজিই পাওয়া যেত।
বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অনেক বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৫২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, দাম কমে এখন ২৪০ টাকায় নেমেছে। প্রতি কেজি করলা ১৫০ টাকায় ওঠে, গতকাল কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
দাম কমে প্রতি কেজি পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স কেজি ৬০ টাকায়, পেঁপে কেজি ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, শসা কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, কচুমুখি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, টমেটো কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, লাউ প্রতিটি আকারভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জোয়ার সাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিলন খান বলেন, ‘বাজারে এখন পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ রয়েছে। ফলে টমেটো ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম কমে গেছে। টমেটো ভারত থেকেই বাড়তি দামে আমদানি করতে হচ্ছে, যার ফলে বাজারে এটির দাম কমছে না।’
মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় গৃহিণী রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চড়া দামের কারণে কিছুদিন আগে স্বল্প আয়ের মানুষ সবজি কিনতে পারেনি। সেই তুলনায় এখন সবজির দাম অনেকটাই কমেছে। এতে সাধারণ মানুষ বাজারে এসে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। তবে সবজির মতো অন্যান্য পণ্যের দামও কমানো উচিত।’
কমেছে মুরগির দামও
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে মুরগির দাম। প্রতি কেজিতে এক লাফে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত বাজারে সরবরাহ ঘাটতির কারণে কিছুটা দাম বেড়েছিল, এখন সরবরাহ বাড়ায় মুরগির দাম কমে এসেছে।’
পেঁয়াজ, আলু, রসুন, ডিম
রাজধানীর পাইকারি কারওয়ান বাজারে সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় এবং প্রতি কেজি আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে আড়তদার জালাল উদ্দিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে পাইকারিতে পাবনার পেঁয়াজ কেজি ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এখন দাম কমে পাবনার পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০৫ থেকে ১০৬ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকলে সামনে দাম আরো কমতে পারে।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু বিক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ বাড়ায় আলুর দাম কেজিতে তিন-চার টাকার মতো কমেছে। এখন পাইকারিতে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, দেশি রসুন কেজি ২২০ টাকায়, আমদানি করা রসুন কেজি ২০০ টাকায়, ছোট দানার মসুর ডাল কেজি ১৪০ টাকায় এবং বড় দানার মসুর ডাল কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।