এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশে ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটে। ধীরগতির পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড-মোবাইল ইন্টারনেট। পরবর্তীতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে ফেসবুকসহ বিভিন্ন বন্ধ করে দেওয়া প্ল্যাটফরম ব্যবহার করছেন।
বর্তমানে প্রাইভেট ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি ব্যবহারকারীর অনলাইন কার্যকলাপকে সুরক্ষিত করতে এবং গোপনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ভিপিএন সেবায় সত্যিকারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভিপিএন ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা।
ভিপিএন ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ভিপিএন ব্যবহারে খেয়াল রাখা প্রয়োজন এর অসুবিধা বা ঝুঁকি কতটুকু।
বিজ্ঞানভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন মাহমুদ জানান, বাজারে প্রচুর ভিপিএন টুল রয়েছে। তিক্ত হলেও সত্য অসংখ্য ভিপিএন অ্যাপ তৈরিই করা হয়েছে ইউজারের তথ্য চুরি করে তা দিয়ে ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য।
২০১৯ সালে গুগল প্লে স্টোরের ১৫০টি জনপ্রিয় ভিপিএনের ২৫ শতাংশের বেশি অ্যাপের বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে যেসব ভিপিএন অ্যাপ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়, সেগুলো থেকে বেশি তথ্য পাচার হচ্ছে। তাছাড়া ভিপিএন সার্ভার সস্তা বা দুর্বল হলে তা সহজেই হ্যাকারের হাতে চলে যেতে পারে। ভিপিএন অ্যাপ হতে পারে হ্যাকার আর আপনার মধ্যে একটা ব্রিজ। বিশেষ করে ফ্রি ভিপিএনের আইপি সহজেই হ্যাক করা সম্ভব।
ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো ইন্টারনেট সংযোগের গতি কমে যাওয়া। যেহেতু ভিপিএন বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মধ্য দিয়ে ডেটা পাঠায় ও ডেটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপ্ট করে; সেহেতু ব্রাউজিংয়ের সময় কম গতি ও বিলম্বের মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে পারেন ব্যবহারকারী।
ভিপিএনের প্রাথমিক কথাই হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। ফলে কোনো কারণে ব্যবহারকারীর ক্রেডেনশিয়াল বা পরিচয় শনাক্তকরণ তথ্যাদি–ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড অন্য কেউ পেয়ে গেলে সেগুলোর অপব্যবহার করে তৃতীয় কেউ তার অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিতে পারে। সহজ ভাষায়, হ্যাকারের হাতে ভিপিএন ব্যবহারকারীর তথ্য চলে গেলে হ্যাকিং অনেক সহজ হয়ে যায়।
একটি ভিপিএন সেটআপ বা কনফিগার করা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর কাছে ভীতিকর হতে পারে, বিশেষ করে এনক্রিপশন প্রোটোকল, সার্ভার বাছাই ও ‘টানেলিং’ আলাদা করার মতো বিভিন্ন উন্নত ফিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
এ ছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগে ‘ট্রাবলসশুটিং’, ‘ডিএনএস’ বা ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম’ ফাঁস বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডিভাইস সেটআপের বেলায় কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা, এমন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তুলনামূলক কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে।
অনেক ভিপিএন গ্রাহক সেবা বিনা মূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা গেলেও প্রিমিয়াম শ্রেণির ভিপিএন সেবাগুলোয় বিভিন্ন উন্নত ফিচার ও উচ্চগতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা মেলে। তবে এ ক্ষেত্রে পয়সা গুনতে হয়।
বিভিন্ন ভিপিএন সেবায় সত্যিকারের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে হাজার হাজার ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ পাওয়া যায়। ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা।