শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪, ০৭:২৩:৪৫

'এমন ভাগ্য কারো না হোক, পাকের ঘরের মেঝেতে মাকে সমাহিত করেছি'

'এমন ভাগ্য কারো না হোক, পাকের ঘরের মেঝেতে মাকে সমাহিত করেছি'

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে বন্যার পানিতে দাহ করতে না পারায় প্রিয়বালা বর্মণ নামে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে নিজের ঘরের মেঝেতেই সমাহিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়বালা বর্মণ দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যার পর বন্যার পানিতে তাদের উঠান ডুবে পানি ঘরে প্রবেশ করে। রাত বাড়ার সঙ্গে ঘরে পানিও বাড়তে থাকে। তখনও প্রিয়বালাকে নিয়ে ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ, তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে অবস্থান করছিলেন। 

একপর্যায়ে মাকে পানি থেকে বাঁচাতে ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে রাখেন ছেলে। খেয়ে না খেয়ে ছয় দিন কাটানোর পর মঙ্গলবার প্রিয়বালা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুরে ছেলে সুকুমার অনেক কষ্টে একটি নৌকা ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। 

কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রিয়বালা। রাস্তা থেকে মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। কিন্তু এলাকার চারদিকে তখনো থইথই পানি। শ্মশানে দাহ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। পরে নিরুপায় হয়ে ঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত করেন।

এ ব্যাপারে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ বলেন, দর্জির কাজ করে অসুস্থ মা ও পরিবার নিয়ে কোনোমতে সংসার চলতো। সেদিন মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘরের মেঝেতে সমাধিস্থ করার জন্য মাটি খুঁড়া শুরু করি। ঘরের অন্য সব কক্ষে পায়ের পাতা অবধি পানি থাকলেও তখন ওই কক্ষে পানি ছিল না। মাটি খোঁড়ার একপর্যায়ে গর্তের মধ্যে পানি উঠা শুরু করে। একদিকে মাটি খুঁড়ছিলাম আরেকদিকে আমার স্ত্রী পানি সেচে ফেলছিল। পরে কোনোরকমে মাকে সেখানে সমাহিত করেছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুকুমার আরও বলেন, এমন ভাগ্য কারো না হোক। কখনো এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারিনি। বন্যায় মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা জানলেও কোনোভাবে সাহস করতে পারিনি। সেজন্যই পাকের ঘরের (রান্নাঘর) মেঝেতে মাকে সমাহিত করেছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে