এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক দুই মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হক। একজন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন, আরেকজন ২০১৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। পুলিশের এই সাবেক দুই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ মামলায় বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকের সাত ও আবদুল্লাহ আল মামুনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সকাল পৌনে ৭টার দিকে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ।
পরে আদালত নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুল হকের ৭ ও মোহাম্মদপুর থানার মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় আবদুল্লাহ আল মামুনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে আনার সময় দুজনকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরানো হয়। তবে কারও হাতে হাতকড়া ছিল না।
আবদুল্লাহ আল মামুন আইজিপি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল থেকে ৬ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। আর শহীদুল হক ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন।
রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি পুলিশ প্রধান থাকা অবস্থায় কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। আমি যতদিন চাকরি করেছি মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনোটাই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’
অপরদিকে আদালতে কোনো কথা বলেননি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আদালতের এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন তিনি। এসময় পুলিশের হেলমেট পরিধেয় অবস্থায় তাকে দেখা যায়।
এদিন আদালতে প্রথমে শহীদুল হকের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির এক পর্যায়ে তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন আদালতকে বলেন, তিনি (শহীদুল হক) ২০১৮ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর সরকারি আর কোনো লাভজনক পদে থাকেননি।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেন এবং জনগণের ভরসার জায়গায় নিয়ে যান। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি একজন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। এসময় তিনি শহীদুল হকের রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এরপর আদালত শহীদুল হকের বক্তব্য শোনেন।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমাকে রিমান্ডে চাওয়া হলো কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমি এ মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
সবশেষে সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামি মামুন চাকরিরত অবস্থায় পদাধিকার বলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশকে কমান্ড করেছেন। তার ব্যক্তিগত কোনো পদক্ষেপ পুলিশের কাছে ন্যস্ত হয়নি। তাকে যদি মামলা দিতেই হয় সেক্ষেত্রে এসব হত্যা মামলা দেওয়া অনুচিত। তিনি চাকরি জীবনে কোনো অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতে পারে।
আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাকে হয়রানি করতেই এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার পরিবার একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবার। তারা সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেছেন, তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।
তিনি হার্টের রোগী, চোখে কম দেখেন এবং ডায়াবেটিসের রোগী। এসব বিবেচনায় তার পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। আদালত শুনানি শেষে তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।