এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ভারতে রপ্তানির খবরে দেশের ইলিশের বাজারে আগুন লেগেছে। পাইকারি বাজার থেকে প্রায় ৭০০ টাকা বেশি লাভে একত কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এটা রোধ করতে ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালালেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু ইলিশ।
জানা গেছে, বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকার কমে মিলছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজির দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। আর কাঁচা মরিচ আগুনঝাল। কেজিতে ৮০-১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। ডিম ও আদার দামও কিছুটা বেড়েছে।
তবে মুরগির দাম কমেছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের কাছে এসেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে চাল, আলু, পেঁয়াজের দাম।
আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বেশি দামেই ইলিশ বিক্রি
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণা দিলে গত সপ্তাহে দাম বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তাতেও দাম কমছে না।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে শক্তভাবে না ধরলে কমবে না ইলিশের দাম। এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের মাছ বিক্রেতা হানিফ বলেন, ‘দাম আমরা বাড়াই না। আড়তে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। ১ কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ১৮০০ টাকা, ৯৫০ গ্রাম ওজনের কেজি ১৬০০ টাকা।’
সোহেল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘ইলিশের দাম বেশি। ওজনে ১ কেজির বেশি ইলিশ ২০০০ টাকা কেজি। ১ কেজি ওজনেরটা ১৮০০ টাকা কেজি। আড়তে বেশি দাম। তাই কম দামে বিক্রি করা যায় না।’
অন্য মাছের দামও কমেনি। বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই রুই-কাতলা আকারভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৪০০-৫০০, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, শিং ৫০০-৭০০, মাগুর ৬০০, কই মাছ ৪০০-৮০০ টাকা ও পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা, কাজলি ১০০০ টাকা কেজি।
বর্ষার প্রভাব সবজিতে, কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা
সপ্তাহের প্রায় দিন কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সবজির দামে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে খেত থেকে সবজি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় সবজির দাম বেড়েছে। টাউন হল বাজারের কালু ব্যাপারীসহ কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ‘আগের সপ্তাহের চেয়ে সবজির দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২৮০-৩০০ টাকা।
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বেগুন ১০০-১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০-৯০, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও ধুন্দুল ৬০-৮০ টাকা। পেঁপে ৩০-৪০, শসা ৬০-৮০, বরবটি ও কচুরলতি ৯০-১০০ টাকা কেজি। টমেটো, গাজর ১৬০ টাকা, শিম ২৩০-২৫০ টাকা এবং লাউ, চালকুমড়া ও কপি প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা। আগের মতোই লাউ, পুঁইশাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, কলমি শাক, লালশাক, পালং এবং পাটশাক ১৫-২০ টাকা আঁটি বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু ও পেঁয়াজে শুল্ক কমালেও আগের মতোই বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, দেশি পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ১১৫ টাকা। আলু ৫৫-৬০ টাকা ও রসুন ২০০-২৪০ টাকা। তবে আদার দাম কিছুটা বেড়ে ২৪০-২৮০ টাকা কেজি হয়েছে।
ডিমের দামও বেশি
ভারত থেকে ডিম আমদানি এবং সরকার ১৪১ টাকা ডজনে দাম বেঁধে দিলেও বাজারে তা মেলে না। বিভিন্ন বাজারে ১৬০-১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। কাজী ফার্মসের প্যাকেট করা ১ ডজন ডিম আরও বেশি ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বিল্লাল হোসেনসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে জানান, কাজী ফার্মসের প্যাকেটজাত ডিমের ডজন ১৯০ টাকা। ক্যারেটের ডিম ১৬০ টাকা ডজন। হাতিরপুল বাজার ও কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে ১৬০-১৬৫ টাকা ডজন ডিম। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতেও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুরগির দাম বেড়ে গেলে সম্প্রতি সরকার দাম বেঁধে দেয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা চিঠিতে ব্রয়লার ১৮০ টাকা ও সোনালির দাম ২৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গতকাল বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার ১৮০-১৯০ টাকা ও সোনালির দাম ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। কেউ আবার ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউসের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কমবেশি হচ্ছে। তাই আগের সপ্তাহের চেয়ে দাম কমেছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার ১৯০ ও সোনালি ২৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও গতকাল ব্রয়লার ১৮০-১৯০ ও সোনালি ২৬০-২৭০ টাকা কেজি। তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কমেনি চালের দাম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দুই মাস চলে গেলেও ভাঙতে পারেনি চালের সিন্ডিকেট। বাজারে দেখা গেছে, আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা। আগের মতোই মসুর ডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ছোলা ১১০-১২০ টাকা কেজি, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি। ১ লিটার সোয়াবিন তেলের দাম ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৭৯০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া চিনির কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা, দেশি লাল চিনি ১৬০-১৭০ টাকা।