বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৪০:১৩

অপকর্মে জড়াচ্ছে বিদেশিরা

অপকর্মে জড়াচ্ছে বিদেশিরা

বিশেষ প্রতিনিধি : ভ্রমণ, ছাত্র ও ব্যবসায়িক ভিসা নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদেশিরা প্রতারণাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লোকজনের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ বেশি।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশিরা এ দেশে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, প্রতারণার ফাঁদ পেতে এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, হুন্ডি, জাল ডলার ও মাদক ব্যবসা এবং মানব পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে।

পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে অনেকেই গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছে। অনেকেই আবার সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।

সম্প্রতি স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) কার্ড ক্লোনিং জালিয়াতির ঘটনায় কয়েকজন বিদেশির জড়িত থাকার সন্দেহ এবং ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার তিনজন নাইজেরিয়ার নাগরিক জিউচে ফ্র্যাঙ্কিন, অবি হেসি ও ইক ফ্লিঅ্যাক্সকে গ্রেফতারের পর বিদেশিদের অপরাধের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবস্থানকারী অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, লিবিয়া, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও এসব বিদেশি অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। এরই মধ্যে এদের অনেককেই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এর বাইরে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কারাগারে আছে প্রায় এক হাজার বিদেশি নাগরিক।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অপরাধে জড়িয়ে পড়া ভিনদেশি নাগরিকরা বেশির ভাগই ভ্রমণ, খেলোয়াড়, মানবাধিকার কর্মীসহ নানা পরিচয় দিয়ে দেশে ঢুকছে। তারা রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, রামপুরা, বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে অবৈধ নাগরিকদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়া বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে যদি কোনো অবৈধ বিদেশি নাগরিককে বাসা ভাড়া দেয় তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

ব্যাংকগুলো আজ ফেরত দিচ্ছে গ্রাহকদের খোয়া যাওয়া টাকা গোয়েন্দা নজরদারিতে পাঁচ বিদেশি নাগরিক : এটিএম বুথে এখনো কোনো ব্যাংক স্থাপন করতে পারেনি এন্টি-স্কিমিং ডিভাইস। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেওয়ার পর চার দিন পার হলেও ব্যাংকগুলো বলছে, দ্রুততম সময়ে স্থাপন করা হবে। এদিকে তিন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা গায়েব হলেও কত-সংখ্যক কার্ডের তথ্য চুরি হয়েছে সে সম্পর্কে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সব ধরনের এটিএম ও ডেবিট কার্ড সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের ক্লোন কার্ড ব্যবহার করা বা সন্দেহজনক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তিন ব্যাংকের সাড়ে ১২০০ কার্ড সন্দেহজনক হিসেবে বাতিল করেছে ব্যাংকগুলো। তিন ব্যাংকের এটিএম থেকে যে সময়গুলোতে লেনদেন হয়েছে, শুধু ওই নির্দিষ্ট সময়ের কার্ডগুলোই হিসাবে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে আরও কার্ডের তথ্য চুরি হয়েছে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ওই দিন ব্যবহৃত ঢাকার গ্রাহকদের লক্ষাধিক কার্ড। এসব কার্ডের ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাংকগুলোকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৮৫ লাখ ও ক্রেডিট কার্ড পাঁচ লাখ। এসব কার্ড ব্যবহারে গ্রাহকের সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। সন্দেহজনক কোনো ধরনের এসএমএস গেলে দেরি না করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

গতকাল দেশি-বিদেশি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, এটিএম কার্ড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহারে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সব এটিএম বুথ নিরীক্ষা করে দেখতে। বুথে কোনো ধরনের ডিভাইস বা অন্য কিছু স্থাপন করা আছে কি না।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো কথা দিয়েছে এক মাসের মধ্যেই এন্টি-স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন করবে। যেসব গ্রাহকের টাকা খোয়া গিয়েছে তা ফেরত দেওয়া হবে। কত টাকা খোয়া গেছে তা নিশ্চিত হতে দুই দিন সময় লেগেছে। আগামীকাল (আজ) সবার টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা জড়িত সেটি পুলিশ দেখছে। যারাই জড়িত হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের ধরার পর কারা জড়িত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পাঁচ বিদেশি নজরদারিতে : এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ছবি দেখে শনাক্ত করা বিদেশি নাগরিককে ধরতে প্রায় একই রকম চেহারার পাঁচ বিদেশির ওপর নজর রাখছে পুলিশ। রাজধানীর বনানীতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) একটি বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের তথ্য চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই বিদেশির ছবি পাওয়া যায়। ওই বিদেশিরা তথ্য চুরি করে ‘ক্লোন’ এটিএম কার্ড তৈরির মাধ্যমে গ্রাহকের অজান্তে হাতিয়ে নেয় টাকা।

১৪ ফেব্রুয়ারি ইউসিবি কর্তৃপক্ষ বনানী ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পল্লবী থানায় মামলা করে এজাহারের সঙ্গে সিসিটিভির ভিডিও জমা দেয়। ওই বিদেশি যাতে বাংলাদেশ থেকে পালাতে না পারে সে জন্য বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে নজরদারি চালাতে অনুরোধ করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। ঠিক একইভাবে ইউসিবি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংকের ছয়টি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে তথ্য চুরির প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই যন্ত্র বসানো অবস্থায় বুথগুলোতে প্রায় সাড়ে ১২০০ কার্ডে লেনদেন হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৪০টি কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকের প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।

পুলিশের ডিআইজি মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফুটেজ দেখে যে বিদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি সম্ভবত পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশের নাগরিক। তার মতো দেখতে যে পাঁচজনের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে, তারাও পূর্ব ইউরোপের। এর মধ্যে আসল অপরাধী কে তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’ -বিডি প্রতিদিন
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে