‘আল্লাহ কী দেহালো, একটা মানুষও কি নাই যে কী দিয়ে কী হলো বলবে আমাদের’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আল্লাহ কী দেহালো। একটা মানুষও কি নাই যে কী দিয়ে কী হলো বলবে আমাদের। কোনো কিছু জানতে পারি নাই। আল্লাহ তালায় আহতও করে, নিহতও করে।

আল্লাহ সবগুলো মানুষ এভাবে নিয়ে গেল’ এভাবে আহাজারি করেন পিরোজপুরে খাদে প্রাইভেট কার পড়ে নিহত শাওনের খালা।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবার) রাত ৩টার দিকে ঢাকা-পিরোজপুর সড়কের স্থানীয় নুরানিগেট সংলগ্ন খালে প্রাইভেট কার পড়ে নিহত ৮ জনের মধ্যে চারজনের বাড়ি জেলার নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত শাওন মৃধা উপজেলা হোগলাবুনিয়া গ্রামের মৃত আসাদুজ্জামান মৃধার ছেলে। পরিবারসহ শাওন ঢাকায় বসবাস করেন।

নিহত শাওনের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার মামার বাড়িতে গেলে জানা যায়, শাওন গত পরশু কুয়াকাটা ভ্রমণ করে গতকাল সন্ধ্যায় মামাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ৩টার দিকে গাড়ি পিরোজপুরের নুরানিগেটে এলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শাওনের পরিবার ও তার বন্ধুর পরিবারের ৮ জন মারা যায়।

নিহতের মামাতো বোন রিমা আক্তার বলেন, ‘শাওন ভাই আমাকে সন্ধ্যায় ফোন করে কুয়াকাটা থেকে আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলেন।

তখন তার সঙ্গে ভাবি ও ভাইয়ার বন্ধুসহ ৮ জনের খাবার রান্না করার কথা বলেন। আমরা খাবার রান্না করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আমার সঙ্গে তাদের রাত ১টার সময় কথা হয়। এরপর আর কথা হয়নি। সকালে ঢাকা থেকে বড় ভাই ফোন করে তাদের নিহতের কথা জানান।

নিহতের বড় মামা বাবুল ফকির বলেন, ‘আমরা তো ঘুমে। ফজরের আজানের সময় শুনেছি ও (শাওন) গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।’

শাওনের বড় মামি বলেন, ‘যখন বাড়িতে আসত তখন বলত কী রান্না করছ? রাতে কিন্তু খাব। ওরা (শাওনরা) পরিবারসহ ঢাকায় থাকে। ঢাকায় ওদের বাড়ি আছে। ওর ছোট মামি বাজার করেছে, রান্না করেছে।’

নিহতের ছোট মামি রেবা বেগম বলেন, ‘শাওনের বউ আমেনার সঙ্গে কথা হলে জানায় তারা কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেখানে সারা দিন কাটানোর পর গতকাল বুধবার রাতে আসার কথা ছিল আমাদের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার আমাদের বাড়িতে থাকার পর রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। শাওনের জন্য রুই মাছ, দেশি মুরগি ও করলা ভাজি করে রেখেছি। কিন্তু সকালে শুনতে পাই তার মৃত্যুর কথা।’

জেলা সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজনের মৃত্যু হয়। প্রাথমিক ধারণা, গাড়িটি পানিতে পড়ার পর পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। পরে তাদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুস সোবাহান বলেন, ‘আমরা রাতে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একে একে আটটি মরদহ উদ্ধার করি। তাদের মধ্যে চারজনের বাড়ি নাজিরপুরে উপজেলা হোগলাবুনিয়া গ্রামে।’

উল্লেখ্য, পিরোজপুরে একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে শিশুসহ দুই পরিবারের আটজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো মোতালেব (৪৫), তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৩০), মেয়ে মুক্তা (১২) ও ছেলে সোয়াইব (২)। তাদের বাড়ি শেরপুর জেলার খোলআচার পাড়ায়।

এ ছাড়া অন্য চারজন হলো শাওন মৃধা (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২৮) ও তাদের দুই ছেলে আবদুল্লা (৩) ও শাহাদাৎ (১০)। এই চারজনের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামে।