এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ইচ্ছে ছিল টাকা-পয়সা রোজগার করে বাবাকে ভালো চিকিৎসা করানো, ছোট ভাইদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। এই স্বপ্ন নিয়ে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট থেকে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তার সেই স্বপ্ন মাটিতে মিশে যায়।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মিরাজ (২১) ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন।
তার সঙ্গে ছিলেন খালাতো ভাই মাজেদুল ইসলাম (২৮)। হঠাৎ পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়, যার ফলে মিরাজ ও মাজেদুল আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তবে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হলেও মিরাজ শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। ৮ আগস্ট সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মিরাজ আদিতমারীর মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এসএসসি পাসের পর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশ দোকানে কাজ নেন।
বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ চালাতে তিনি সংসারের হাল ধরেছিলেন। বাবার চিকিৎসার জন্য ৩-৪ লাখ টাকা ঋণও করেছিলেন তিনি। মিরাজকে এলাকাবাসী একজন নম্র ও প্রতিবাদী যুবক হিসেবে জানতেন।
মিরাজের বাবা আব্দুস সালাম বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর আমাদের একেকটা দিন যেন একেকটা বছর। সংসারের হাল ধরার মতো কেউ আর নেই।
তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে তাকে সিএনজি চালানো ছেড়ে দিতে হয় এবং চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। মিরাজের পরিবারের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থা থেকে কিছু অর্থ সহায়তা পেয়েছেন তারা।
মিরাজের মা মোহসেনা বেগম বলেন, "আমার কলিজার টুকরা আর ফিরবে না, এই কথা ভেবেই চোখের পাতা এক করতে পারি না। সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে, তবে হয়তো সংসারটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।"
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফ আলী বলেন, মিরাজের মৃত্যুতে পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।" আর মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, "মিরাজ একজন ভালো ছেলে ছিল, তার হত্যার বিচার চাই আমরা।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।