এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয়। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ১০।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফল জেনে শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দ উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত প্রিয়। প্রিয়’র এমন সাফল্যে কাঁদছেন তার মা-বাবা ও স্বজনরা।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরে বিজয় মিছিলে বের হয়ে জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হন তিনি। প্রিয় যশোর শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিনী রেহেনা পারভীন দম্পতির সন্তান। প্রিয় ছাড়াও এই দম্পতির ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে যখন বাড়িতে আনন্দ উল্লাস হওয়ার কথা; তখন বাড়ি জুড়েই চলছে শোকের মাতম। প্রিয়’র ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে তখন বিলাপ করছেন মা রেহেনা পারভীন। টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর নানা বই নেড়ে চড়ে মুছছেন।
রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলে যে কত ভালো। বাবা মা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিল না। স্বপ্ন দেখতো তার দুই ভাইকে মানুষ করবে, মা বাবাকেও দেখাশোনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন! প্রিয়’র পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।’
তিনি কান্নাজড়িত কণ্টে বলেন, ‘আমার সবই আছে, শুধু নেই প্রিয়। মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। বলবে, দেখো মা আমি পাস করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে। সবাই বলছে সে ভালো রেজাল্ট করেছে। আমার ভেতরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না আমার বুকের ধনকে ছাড়া। সে বেঁচে থাকলে কত আনন্দ করত, খুশি হতো। তা দেখে গর্ব করতাম আমিও।’
প্রিয়’র বাবা শাকিল ওয়াহিদ নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে বলতো বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমার দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইলটেষ্ট করবো, বিদেশ যাব। সংসারটা আমিই দেখব। সাথে ছোট দুই ভাইকে বড় করব।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো ৫ তারিখে মারা গেছে। তবে আজ রেজাল্টটার খবর শুনে আত্মীয় স্বজনেরা যখন ফোন দিচ্ছে; তখন বুকের ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার সন্তানের দ্বিতীয় মৃত্যু হলো। তিনি জানান, এসএসসিতে প্রিয় জিপিএ-৫ পেলে এলাকায় মিষ্টি খায়িয়ে ছিলাম। এবার ছেলে নাই......। আমি বুকে কষ্ট চেপে দিন পার করছি।’
প্রিয়’র বন্ধুরা জানান, প্রিয় অনেক সাহসী ও পরোপকারী। তাই তো ৫ আগস্ট বিকালে শহরের চিত্রামোড়স্থ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ১৪ তলা বিশিষ্ট জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনালে আগুনে জ্বলতে দেখে আটকে থাকাদের উদ্ধারে নেমে পড়ে। কয়েকজনকে বাঁচাতে পারলেও নিজ আটকে গিয়ে পুড়ে অঙ্গার হয়। পরীক্ষার ফলাফলে সবাই যখন উল্লাস করছে, তখন চিরনিদ্রায় প্রিয়।
প্রসঙ্গত, জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয় ২৪ জন। এর মধ্যে একজন ছিলেন বিদেশি নাগরিক।