শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৪:১২:০৫

নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে বিএনপির কাউন্সিল

নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে বিএনপির কাউন্সিল

কাফি কামাল : নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে বিএনপির আসন্ন ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। আগামী ১৯শে মার্চ কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা ও প্রস্তুতির জন্য এক ডজন উপকমিটি গঠন করেছে দলটি।

ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে প্রস্তুতিও নিচ্ছে উপকমিটিগুলো। কিন্তু সম্ভাব্য তিনটি ভেন্যুর জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদনের দীর্ঘদিন পরও মেলেনি অনুমতি। অপেক্ষার পর বিকল্প একটি ভেন্যুর চেষ্টা করেছিল বিএনপি। সেখানেও তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সরকারের চাপের মুখে সে বিকল্প ভেন্যু কর্তৃপক্ষও না করে দিয়েছে বিএনপিকে।

এদিকে কাউন্সিলের দুই পর্বের জন্য আউটডোর ও ইনডোর ভেন্যুর প্রয়োজন। আউটডোর ভেন্যু হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারে গণপূর্ত অধিদপ্তর অনুমতি মিললেও সেটা ব্যবহারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিএনপি। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি।

ওদিকে বিএনপির কাউন্সিলের জন্য ঘোষিত তারিখের পরদিন ১০টি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। দুদিন পর ২২শে মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করেছে সরকার। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সে নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে দলটিতে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনের দুদিন আগে কাউন্সিল আয়োজন নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। একসঙ্গে কাউন্সিল ও ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিএনপিকে পড়তে হচ্ছে নানামুখী জটিলতায়। ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি বিঘ্ন ঘটাচ্ছে কাউন্সিলের প্রস্তুতিতে।

কারণ যারা উপজেলা পর্যায়ে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বা নেতৃত্বে আসবেন তাদের অনেকেই আবার ইউপি নির্বাচনে অংশ নেবেন। ফলে তারা সম্মেলনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকলে পিছিয়ে পড়বেন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে।

এছাড়া পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্র্মীদের মধ্যে কোন অসন্তোষ তৈরি হলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ইউপি নির্বাচনে। তার ওপর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে ধরপাকড়। গত এক সপ্তাহে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে গতরাতে কাউন্সিল প্রস্তুতি উপকমিটিগুলোর আহ্বায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে চলছে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এ প্রক্রিয়া শুরু হলেও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা-হামলা, ঈদুল আজহা এবং পৌর নির্বাচনের কারণে তা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। বহু জেলায় এখনও কিছু কিছু ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠনের কাজ অসমপূর্ণ রয়ে গেছে।  

এদিকে দলের গঠনতন্ত্র ও নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর নতুন করে সে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় জোর দেয়া হয়। জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বেশির ভাগ জেলার সম্মেলন ও কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দলের তরফে একটি চেষ্টা ছিল। কিন্তু ইউপি নির্বাচনের কারণে অনেক জেলায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পুনর্গঠন ও সম্মেলনের দিকে জোর দিলে বিঘ্ন ঘটবে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রের কাছে এ সমস্যার কথা জানানো হচ্ছে। এদিকে ভেন্যুর অনুমতি না পাওয়ায় জোরালোভাবে কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে পারছে না বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি কাউন্সিলের অনুমতি পাবে কিনা এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। তবে যথাসময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে অনড় বিএনপি।

নেতারা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে অনুমতি দেবে সরকার। তাঁতী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস সরকার বিএনপিকে কাউন্সিল করতে দেবে। তবে তারা চায় কিভাবে আমরা অসুবিধায় পড়ি। এ জন্য সময়ক্ষেপণ করে আমাদের ঝামেলায় ফেলে হয়তো শেষ মুহূর্তেই অনুমতি দেবে সরকার। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি কাউন্সিল পেছাবে বিএনপি?

এ ব্যাপারে দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, যথাসময়ে কাউন্সিলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বিএনপি। প্রয়োজনে কাউন্সিলের আগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনের ব্যাপারে কিছু ছাড় দেয়া হতে পারে। কাউন্সিল এবং ইউপি নির্বাচনের ব্যাপারে তৎপরতা জোরদার করা হবে। এ ব্যাপারে বৈঠকে উপকমিটির আহ্বায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলোচনা করার কথা রয়েছে।

বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির কাউন্সিলকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার ইচ্ছা করেই ইউপি নির্বাচনের আয়োজন করেছে। তারা চায় না বিএনপি সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠিত হোক। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের জন্য যেমন প্রস্তুতি নেবে, যথাসময়ে কাউন্সিলের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলবে। -এম.জমিন

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে