রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:৪০:৫৭

কেন হঠাৎ কেজিতে এত বাড়লো দেশি পেঁয়াজের দাম? জানা গেল কারণ

কেন হঠাৎ কেজিতে এত বাড়লো দেশি পেঁয়াজের দাম? জানা গেল কারণ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশী পেঁয়াজের মজুত কমে আসছে। ফলে বাজারে এই পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। আর সরবরাহ কমে যাওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার কাওরানবাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আর দেশী পেয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও খুচরা পর্যায়ে বেড়ে গেছে। ফলে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এতে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু মানুষ দেশি পেঁয়াজ কিনতে বেশি আগ্রহী। এতে করে আমদানি করা পেঁয়াজ ও দেশি পেঁয়াজের দামের মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে গিয়ে দেশী পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষকরা নিজেদের জেলাতে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা সেই পেঁয়াজ কিনে আনেন রাজধানীতে। জেলা পর্যায়েই দেশী পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।

তেজতুরীবাজারের বাসিন্দা সবুজ মিয়া কাওরান বাজারে এসেছিলেন সবজি কিনতে। তিনি জানান, গত সপ্তাহেও তিনি ১২০ টাকা দরে দুই কেজি দেশী পেঁয়াজ কিনেছিলেন।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহেও ছিল ১০০ টাকা। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। আর পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন সবুজ মিয়া।

মিরপুরের পল্লবী সম্প্রসারণ এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে।’ 
কাওরানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সজিব শেখ জানান, তিনি সাধারণত মানিকগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার বাজার থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে জেলাগুলোর স্থানীয় বাজারে কম পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।

দুদিন আগে তিনি মানভেদে এই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ১২২ টাকা থেকে ১৩২ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তিনি একই জাতের পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন ১০৭ টাকা থেকে ১১৭ টাকা দরে।

রবিবার কাওরানবাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়েছে।পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ক্রেতারা খুচরা পেঁয়াজ কিনেছেন ১৫০ টাকা দরে।

পেঁয়াজ বিক্রির অন্যতম কেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে দেশী পেঁয়াজের ঘাটতি আছে। আমরা চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পাচ্ছি। এ কারণেই দাম এত বেড়েছে। আগামী তিন মাস পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ কোনো কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহে বিদেশী পেঁয়াজের দাম কমেছে।’
তবে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন  বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে ১০৩ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।’

তার দাবি, বন্যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের গুণমানও কমেছে। তাই প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা বাংলাদেশে কম।

গত ছয় মাস ধরে ক্রমাগত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ল। গত এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। এতে স্বল্প ও মধ্যবিত্তের সংকট আরও বেড়ে গেছে। 

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এখন তা ১১৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির তথ্য অনুসারে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৯০ থেকে ১০৫ টাকা। সংস্থাটির তথ্যে আরও জানা যায়, গত এক বছরে দেশী পেঁয়াজের দাম ২৫ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর দেশে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। মন্ত্রণালয় আরও বলছে, হিমাগারের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ছয় থেকে সাত লাখ টন আমদানি করতে হবে।

গত শনিবার দেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনায় পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি (প্রায় ৩৭ কেজি) বেড়ে পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে তাতে পাইকারদের চাহিদা এক মাসের বেশি মেটানো সম্ভব। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাবে।’
বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখন অনেক চাষি শীতের আগাম জাতের পেঁয়াজ রোপণ করছেন। আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে এই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় অনেকে পুরনো পেঁয়াজ থেকে বীজ উৎপাদন করেন। যারা বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেন তারাও কৃষকদের কাছ থেকে পুরনো পেঁয়াজ কেনেন। এ কারণে অক্টোবরে পুরনো পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এটা প্রতিবছরই হয়ে থাকে।’

এ সময়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি জানান, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজ চাষ হয়। পরের বছর মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে সেই পেঁয়াজ বাজারে আসে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে