শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০২:৩৭:৪২

বিএনপিতে খালেদা-তারেকের শূন্যস্থানে তারেকের স্ত্রী!

বিএনপিতে খালেদা-তারেকের শূন্যস্থানে তারেকের স্ত্রী!

কাজী সিরাজ : ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আর বেশি দিন বাকি নেই। পৌরসভা নির্বাচন থেকে দেশের রাজনৈতিক হাল-হকিকত অনুয়ায়ী ধারণা করা হচ্ছিল যে, শাসকদল আওয়ামী লীগ তাদের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপিকে নির্বিঘ্নে কাউন্সিল করতে দেবে।

কিন্তু বিএনপি অভিযোগ করছে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের উপযুক্ত জায়গার অনুমতি তারা এখনো পায়নি। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়েছিল তারা। সিটি করপোরেশন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি দিলেও পুলিশ আপত্তি করছে। নিরাপত্তার কথা বলছে তারা।

এ রকম একটি বড় রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল উন্মুক্ত স্থানে করার ঝুঁকি তো আছে বটেই। রাজনৈতিক দলকে এমন ঝুঁকি বা নিরাপত্তা হুমকির কথা বলা হলে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কী করে? নানা অজুহাত দেখিয়ে সম্মেলন, সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠানে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেতিবাচক অবস্থানে অটল থাকে তাহলে মাঠে-ময়দান থেকে রাজনীতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কি চার দেয়ালে বন্দি হয়ে যাবে?

অন্য দুটি স্থানেরও অনুমতি মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে নাকি জানানো হয়েছে, তারা রাজনৈতিক দলকে এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয় না। অথচ বিএনপির গত সম্মেলনটি এ কেন্দ্রেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্মেলন ছাড়াও দলীয় অনুষ্ঠান করেছে সেখানে। তাতে অসুবিধা কি?

সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলই সম্প্রতি সভা-সমাবেশ করেছে। নিরাপত্তা হুমকির কথা যদি বলা হয়, প্রশ্ন আসতেই পারে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে কেন? ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনেও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মতো নিরাপত্তা হুমকির কথাই বিবেচনা করা হচ্ছে?

সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত অজুহাতই দেখাক না কেন পাবলিক পারসেপশন হচ্ছে, সরকারের কারসাজিতেই বিএনপি তার কাউন্সিলের জন্য স্থান বরাদ্দ পাচ্ছে না। এর ফলে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার কীভাবে সংকুচিত করে রাখা হয়েছে সে বার্তাটি সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

আমাদের সংবিধানের ‘মৌলিক অধিকার’ অংশে এ ব্যাপারে নাগরিকদের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে— দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের স্থান বরাদ্দ নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে সমান সুযোগ দেওয়া। এ ব্যাপারে বদনামটা সরকার কাঁধে না নিলেও পারে। বদনামের তো শেষ নেই। একটা বদনাম অন্তত কমুক না।

জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে কোনো দলেই দেশব্যাপী তেমন কর্মচাঞ্চল্য নেই। জাতীয় কাউন্সিলের আগে দুই দলেই জেলা ও থানা পর্যায়ের কাউন্সিল-সম্মেলনের ‘ধুম’ পড়ে যাওয়ার কথা। সম্মেলন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে জেলা ও থানার নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে প্রাণের জোয়ার জাগার কথা।

কিন্তু কই? গত এক মাসে লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এক জেলা সম্মেলনে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আরেক জেলা সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার খবর ছাড়া তারা দুজন বা দলের অন্যান্য নেতারা ঢাকার বাইরে কাউন্সিল উপলক্ষে ব্যাপক সাংগঠনিক সফরে গেছেন, তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

সরকারে থাকার কারণে আওয়ামী লীগের কিছু সুবিধা আছে। তাদের সাংগঠনিক সমস্যা আছে, কিন্তু কোনো বিপদ-আপদ আপাতত নেই, জেল-জুলুমের ভয় নেই। বাকি যে সময় এখনো হাতে আছে, কাউন্সিল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে তাদের বেগ পেতে হবে না। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য অনেক জেলায়, বহু উপজেলায় তারা সম্মেলন করতে পারবে না বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক।

সরকারি ক্ষমতার পাশাপাশি দলীয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বও দলটিতে প্রকট। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সব সরকারি অফিসে-দফতরে এমনকি থানা পুলিশের ওপরও তাদের প্রচণ্ড দাপট। একটা কথা এ প্রসঙ্গে অনেকেই বলেন, ক্ষমতার দাপট দেখানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি একেবারে ‘নস্যি’। তবে এ কথা বলছি না যে, বিএনপির লোকজন একেবারে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’। সরকারি অফিসে-দফতরে চোটপাট, খবরদারির সঙ্গে ‘অর্থ’যোগ আছে।

আছে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি, তদবিরবাজি! দলের নেতা (ভাইজান) না হলে কোথাও তেমন পাত্তা পাওয়া যায় না। তাই চলে নেতৃত্ব দখলের লড়াই, কখনো কখনো চলে নেতৃত্ব ক্রয়-বিক্রয়ের অসাধু প্রক্রিয়া। শাসক দল হিসেবে এখন আওয়ামী লীগের এ বিপদটা বেশি। তাই বোধহয় জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখেও সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন-কাউন্সিলের ঝুঁকি নিচ্ছে না শাসক লীগ। জোড়াতালি দিয়েই চালিয়ে দেওয়া হবে হয়তো।

বিএনপির জন্য সম্মেলনটা ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুবর্ণ সুযোগ। জাতীয় কাউন্সিলের কথা তারা বলছে দুই মাস আগে থেকে। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হয়নি। বিএনপির বয়স এখন আটত্রিশ। এমন পুরনো একটি দল সরকারি সব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও একটা স্পন্দন তুলতে পারত সারা দেশের তৃণমূল পর্যন্ত। কিন্তু পারেনি।

২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ, এই তিন মাসে যে আত্মঘাতী কর্মসূচি পালন করেছে তাতে অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে দলটি। তবে অন্য সময় বিএনপির সঙ্গে সরকার যে রূঢ় আচরণ করেছে, গত দুই মাস তা করেনি। গ্রেফতার এবং মামলা-হামলার পরিমাণও কিছুটা কমেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার ও  গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও আমানউল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রের এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

প্রত্যেক দিন সকাল-দুপুর আরামের প্রেস ব্রিফিং করে যেভাবে জেল-জুলুমের কথা বলা হয়, তেমন হলে তো এ কথাগুলো বলার লোকও থাকত না। পদ পদবিধারীরা প্রায় সবাই বাইরে আছেন। কারও বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের গুঞ্জন উঠলে মাঝে মাঝে কেউ কেউ গ্রেফতার হন।

এরা গ্রেফতার হন না গ্রেফতার বরণ করেন তা নিয়েও নানা মুখরোচক আলোচনা শোনা যায়। তারা বেশিদিন জেলে থাকেন না। আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে ‘সদ্য কারামুক্ত সংগ্রামী নেতা’ হয়ে যান। বেঁচে যায় পদ-পদবি; আপাতত ঘুচে যায় ‘দালালি’র বদনাম।

যে কথা বলছিলাম, প্রায় সবাই বাইরে আছেন। অথচ দলের জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে অনেকের তৎপরতাই দৃশ্যমান নয়। জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়ার আগেই দলীয় পুনর্গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর সে গর্জন শোনা গেলেও ‘বর্ষণ’ সে তুলনায় কিছুই হয়নি।

অনেক বড় বড় পদধারী আছেন যার এলাকায় থানায়, জেলায় দলের এমন নাজুক অবস্থা যে, অনেকটা ঠেক দিয়ে রাখার মতো। জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে একটা মোটামুটি সহনশীল পরিবেশে দলকে সত্যিকার অর্থে পুনর্গঠন করা যেত। ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে দেওয়া যেত ঘুমন্ত বিএনপিকে। কিন্তু ঘুম তাড়ানিয়া গান গাইতে পারেননি দলের ‘গায়েন’রা।

কেন পারেননি সে ব্যাপারেও অনেক কথা চালু আছে। বলা হয়ে থাকে অনেকের ‘আমলনামা’ এত খারাপ যে, হিসাব নিতে হয় না, ‘আমলনামাটা’ স্মরণ করিয়ে দিলেই তারা কাতর, কাবু হয়ে যান। এক সময় যার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল তীব্র, এখন তার হারাবার ভয় বেশি। তিনি ঝুঁকি নেবেন কি করে? সহজপ্রাপ্য বিত্ত-বৈভব ভোগের সুখের চেয়ে হারানোর শোক নাকি পুত্রশোকের মতো।

এ ধরনের ব্যক্তিরা বিএনপি থেকে নিয়েছেই বেশি, দিয়েছে খুব কম। এদের দিয়ে, এদের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের চিন্তাটাই ছিল ভুল। বিএনপিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণকারীরা বলতে চান, যেহেতু দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই এবং দলের ভিতর থেকে কেউ এ ব্যাপারে প্রশ্নও তোলে না, তাই সুযোগ ছিল সত্যিকারভাবে দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সর্বাগ্রে পুনর্গঠন।

এ ধরনের কমিটিতে থাকার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা সব দলেই থাকে। ছোটখাটো দলেও বুলিবাগিশ, কুচক্রী এবং রাজনীতি ও সংগঠনে অন্তত উল্লেখযোগ্য অবদানহীনদের রাখা হয় না। বিএনপির শত্রুরাও বলবেন, দলটিতে তেমন প্রাজ্ঞজনের এখনো আকাল পড়েনি।

পার্টি চেয়ারপারসন তেমন একটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতেন। অন্যান্য কমিটিসমূহও ভেঙেচুরে কাউন্সিল সামনে রেখে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে কমিটেড, যোগ্য, সৎ সাহসীদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়ে দল পুনর্গঠনে তাদের ছেড়ে দিলে দল অনেক ভালো ফল পেতে পারত বলে ধারণা করেন তারা।

দলের নাজুক অবস্থাতেই হচ্ছে জাতীয় কাউন্সিল। ধারণা করা যায়, শেষ পর্যন্ত সরকার বিএনপিকে কাউন্সিল করার স্থান পেতে সহায়তা করবে। দলটির হর্তাকর্তাদের সেভাবেই চিন্তাভাবনা করে এগোবার কথা। কিন্তু বৈরী পরিস্থিতিতে কাউন্সিল সফল করার কাজে মনোনিবেশ না করে দলের ক্ষুদ্র একটি কোটারী মহাসচিব পদ নিয়ে চক্রান্তমূলক তত্পরতা শুরু করেছে বলে মিডিয়ায় খবর এসেছে।

দলটির প্রায় সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এমনকি রাজনীতির খবরাখবর রাখা সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা ধারণা যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলটির মহাসচিব হবেন। তাকে এতদিন ঝুলিয়ে রাখাও মানুষ পছন্দ করেনি। শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল একটি অসাধু চক্রের ষড়যন্ত্রের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা।

তারা মান্নান ভূঁইয়াকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে খোন্দকার মোশাররফ হোসেন কিংবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মহাসচিব করতে চেয়েছেন বলে শোনা গিয়েছিল। তারা নিজেদের কট্টরপন্থি বলে পরিচয় দিতে আনন্দবোধ করত। মান্নান ভূঁইয়াকে তারা বলত উদারপন্থি। তারা এখনো জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসের মতো দেশে চরম আন্দোলনের নামে সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।

বেগম খালেদা জিয়া তাদের কথা শোনেননি বলে বেঁচেছেন, দলও বেঁচেছে। সেই কোটারিরই একটি অংশ আবার নতুন করে পুরনো খেলায় মেতেছে বলে মনে হয়। এ কোটারিটি দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া বলে মনে হচ্ছে। মির্জা ফখরুল মহাসচিব হয়ে গেলে বিএনপি নিয়ে কোথাও তাদের ‘বার্গেইন পাওয়ার’ হয়তো কমে যাবে।

পদটির প্রতি যাদের নজর বেশি, নানা কারণে তারা নিজের নাম প্রপোজ করতে পারছে না বলেই সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে নিয়ে খেলায় মেতেছে। এর আগে তরিকুল ইসলাম বিএনপি মহাসচিবের পদ গ্রহণে সম্মত হননি স্বাস্থ্যগত কারণে। আমরা জানি, তার স্বাস্থ্যঝুঁকি এখন আগের চেয়ে বেশি।

একটি খবরি কাগজে পড়লাম, তিনি নাকি এখন ‘সাধিলে খাইবেন’। হঠাৎ তার মতের পরিবর্তন কেন হলো তা রহস্যাবৃত্ত। এ তত্পরতা যদি অব্যাহত থাকে তাতে ওই কোটারির লাভ-ক্ষতি কী জানি না, তবে দলটি নিশ্চিতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কিছু দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় দলের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি কিছুটা সবল হয়ে ওঠায় চক্রটি নড়েচড়ে উঠেছে এবং দলে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য নানামুখী তত্পরতার একটি অংশ হচ্ছে মির্জা ফখরুলের পদ দখল করা।

দলের কী অবস্থা, দলের জন্য কী করা দরকার সেসব নিয়ে ভাবনা নেই, ভাবনা একটাই, মির্জা ফখরুলের সামনে কীভাবে ব্যারিকেড দেওয়া যায়। দেখতে হবে বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান কী চান? ফখরুল ইসলাম না তরিকুল ইসলাম।

ভাবতে অবাক লাগে, দুঃসময় অতিক্রম করে যে দলের কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করার কথা, সে দলে নতুন নেতৃত্ব কাঠামো নির্মাণের দৃঢ়তা দেখানোর কথা, সেই দলে ‘সবে ধন নীলমণি’ যা আছে তাও হটিয়ে দিয়ে পদ দখলের ঘৃণ্য চক্রান্ত চলে। পত্র-পত্রিকায় চক্রান্তকারী হিসেবে যাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তাদের দলীয় রেকর্ড খুব ভালো নয়।

দলের জন্য এদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথাও শোনা যায় না। মাঝখানে এরা দুই মহাসচিব তত্ত্ব হাজির করে একজনকে রাজনৈতিক ও আরেকজনকে সাংগঠনিক মহাসচিব করার ধুয়ো তুলেছিল। এখন মির্জা ফখরুলকে একেবারে মাইনাসই করে দিতে চাচ্ছে। ত্যাগের কী পুরস্কার দিতে চাচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি বাজারে আরও একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে যে, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনিশ্চিত অনিশ্চয়তা  বিবেচনা করে মাতা-পুত্র তেমন চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে।

অনেকেই একে উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে পারিবারিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেনে নিলেও এর ফলাফল নিয়ে আশাবাদী নন। একটি রাজনৈতিক দলের রাজনীতি ও আদর্শ যদি জনমনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত না থাকে পারিবারিক উত্তরাধিকার দিয়ে দল ঠিক রাখা যায় না।

তাই যদি হতো, ভারতে কংগ্রেসের পাকিস্তানে পিপলস পার্টির এবং শ্রীলঙ্কায় বন্দর নায়েকের পার্টির বর্তমান হাল হতো না। বিএনপি যদি এ কাউন্সিলে তার প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে ফিরে যায় এবং ভারতনীতিসহ দলের বৈদেশিক সম্পর্কনীতি স্পষ্ট করে আবার সাহসী অবস্থান নিতে পারে এবং দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার প্রচলন করতে পারে তাহলেই দলটি আবার দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীদের একটি নির্ভরযোগ্য শক্তিতে পরিণত হতে পারে। সমগ্র দেশবাসীরও সমীহ আদায় করতে পারে। -বিডি প্রতিদিন

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে